কাশাদহ সেচ প্রকল্পের উৎসে পানি সংকট

মানিকগঞ্জে বোরো উৎপাদনে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে কাশাদহ সেচ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। যমুনা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে এসব জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা হয়। তবে যমুনায় চর জেগে ওঠায় পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে বোরো আবাদ করতে পারছেন না কৃষক। দ্রুত পানি সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে বোরো উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা কৃষকের।

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে কাশাদহ সেচ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। যমুনা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে এসব জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা হয়। তবে যমুনায় চর জেগে ওঠায় পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে বোরো আবাদ করতে পারছেন না কৃষক। দ্রুত পানি সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে বোরো উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা কৃষকের।

সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, শিবালয়ের বোয়ালি, আনুলিয়া, অন্বয়পুরসহ  ১৪-১৫টি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমি শুষ্ক মৌসুমে ফেটে চৌচির হয়ে থাকত। ওইসব জমিতে চাষাবাদ করা যেত না। এসব জমি চাষের আওতায় আনতে ১৯৮০ সালে কাশাদহ সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে পানির অপচয় রোধ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সেচ প্রকল্পটি ২০০৪ সালে শিবালয় ক্ষুদ্র পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সরকারিভাবে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েক দফা খাল খননসহ নির্মাণ করা হয় পাকা ড্রেন ও পানির হাউজ। কিন্তু এ বছর দেখা দিয়েছে বিপত্তি। যমুনা নদীতে চর জেগে পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বোরো আবাদের ভরা মৌসুম চললেও সেচের অভাবে চাষ করতে পারছে না কৃষক।

কাশাদহ সেচ প্রকল্পের সভাপতি মো. মশিউর রহমান আওয়াল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি যমুনা নদী থেকে পানি তুলে বোরো আবাদ করে আসছি। এ বছর পানির হাউজের সামনে যমুনা নদীতে চর জেগে উঠেছে। এতে হাউজ এলাকা থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে সরে গেছে মূল নদী। তবে চর কেটে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ফারাক্কার প্রভাব এবং নদীর উজানে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে নদী গবেষক দীপক কুমার ঘোষ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে পদ্মা ও যমুনায় জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। নদীগুলো হারিয়ে ফেলেছে গভীরতা। এ কারণে শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো শুকিয়ে পানিশূন্য। এতে সেচ ও মাছ সংকট এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের পানিসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। আরিচা ঘাটের কাছে যমুনা নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বন্ধ হওয়ার পথে কাশাদহ সেচ প্রকল্পের সেচ কার্যক্রম। এ অবস্থায় এবার বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’

কৃষক জানান, সরিষা তোলার পর জমি চাষ করে পতিত রেখেছেন। পানির অভাবে বোরো আবাদ করতে পারছেন না। বীজতলায় নষ্ট হচ্ছে ধানের চারা। সেচের অভাবে এবার বোরো আবাদ করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। প্রায় ৪৩ বছর ধরে সেচ প্রকল্পের অধীনে বোরো আবাদ করে আসছেন তারা। এতে একদিকে নদীর আয়রনমুক্ত পানি দেয়ায় জমির উর্বরতা ঠিক থাকছে, অন্যদিকে সেচ খরচও অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। এবার নদীতে চর জেগে পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। সেচের অভাবে এবার বোরো আবাদ করতে না পারলে খাদ্য সংকট দেখা দেবে তাদের। স্যালো মেশিনে বোরো আবাদে খরচ অনেক বেশি। তাই দ্রুত সেচ প্রকল্পটি সচল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

উপজেলার বড় আনুলিয়া গ্রামের কৃষক মোকসেদ আলী ছয় বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলেন। সরিষা তোলার পর সেচের অভাবে এখনো বোরো আবাদ শুরু করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘রোদে জমি ফেটে গেছে। সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখনো বোরো আবাদ শুরু করতে পারিনি।’ দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করা দাবি তার।

কৃষক বাচ্চু শেখ বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে জমি থেকে সরিষা উঠানো হয়েছে। পানির অভাবে এখনো জমি চাষ করতে পারছি না। অন্যান্য বছর এত দিনে ধানের চারা রোপণ করা হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর পানির অভাবে জমিই তৈরি করতে পারছি না। ঘরের খাবারও শেষ হয়ে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার বলেন, ‘এ অঞ্চলে বোরো আবাদ করা না হলে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি ধান উৎপাদন কমে গেলে এর প্রভাব পড়বে খাদ্যের ওপর। উপজেলা প্রশাসন এবং পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চর কেটে যমুনার মূল উৎস থেকে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

আরও