এনবিআরে এফবিসিসিআইয়ের চিঠি

জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ কমানো ও কাঁচামাল আমদানিতে এআইটি এটি প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

ফ্ল্যাট ও জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা প্রকৃত মূল্যে রেজিস্ট্রেশন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে এ খাত থেকে যথাযথ রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। সেজন্য রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানোর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)। এছাড়া কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও অগ্রিম কর (এটি) প্রত্যাহারেরও

ফ্ল্যাট ও জমি রেজিস্ট্রেশন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা প্রকৃত মূল্যে রেজিস্ট্রেশন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে এ খাত থেকে যথাযথ রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। সেজন্য রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানোর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)। এছাড়া কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও অগ্রিম কর (এটি) প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে তারা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে সংগঠনটি প্রস্তাবিত বাজেটের (২০২৩-২৪) একাধিক বিষয়ে পরিবর্তন ও সংযোজনের দাবি জানিয়ে এসব সুপারিশ করেছে। 

এফবিসিসিআই ফ্ল্যাট ও প্লট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ গেইন ট্যাক্স, শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ স্ট্যাম্প ফি, শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি, ১ শতাংশ স্থানীয় সরকার কর ও ১ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ধার্য করার দাবি জানিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অনেক বেশি এবং এসব দেশে এ ব্যয় ৪-৫ শতাংশের বেশি নয়। সেজন্য দ্রুত রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানো প্রয়োজন বলে মনে করছে এফবিসিসিআই। 

এছাড়া দ্বিতীয়বার ফ্ল্যাট বা প্লট ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সব ধরনের ফি সর্বোচ্চ ২ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে একই সম্পত্তি একাধিকবার হাতবদল হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি আবাসন শিল্পের জন্য ‘সেকেন্ডারি বাজার’ সৃষ্টিসহ উন্নত দেশের মতো ‘রিয়েল এস্টেট মার্কেট’ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলে মনে করে সংগঠনটি। 

এছাড়া আমদানি পর্যায়ে বিভিন্ন কাঁচামালের ওপর এআইটি ও এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, আমদানি পর্যায়ে বিভিন্ন কাঁচামাল বা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর নেয়া হয়। এতে কস্ট অব ক্যাপিটাল বেড়ে যাচ্ছে। এ টাকার ওপর ব্যাংকে সুদ গুনতে হচ্ছে। অগ্রিম আয়কর যথাযথ সমন্বয় রিফান্ড না হওয়ায় পরিচালন যায় বাড়ছে। তাই এআইটি ও এটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এআইটি ও এটি বিলুপ্ত করা হলে উৎপাদন ব্যয় কমবে, পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি বাড়বে। ফলে ভ্যাটের মাধ্যমে সরকার বাড়তি রাজস্ব আয়ে সক্ষম হবে। 

সংগঠনটি আয়করসংক্রান্ত প্রস্তাবে জানায়, করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করা, রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য পণ্য রফতানির বিপরীতে উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা এবং রফতানিমুখী সব শিল্পের প্রণোদনার ওপর আয়কর বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া তুলার মূল্য পরিশোধে ২ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার, ফ্লেক্স ফাইবার থেকে এআইটি ও এটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, পাইকারি পর্যায়ে সুতা ও তুলা লেনদেনের ওপর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার, সিমেন্ট ও লাইমস্টোনের ওপর এআইটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই। 

এছাড়া আমদানি শুল্ক খাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে পাঁচ বছরের জন্য শুল্ককর প্রত্যাহার, সিমেন্ট ক্লিঙ্কারের কাস্টমস ডিউটি আগের মতো প্রতি টনে ৫০০ টাকা বহাল, আপেল-কমলার ওপর প্রস্তাবিত অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ও খেজুরের ওপর প্রস্তাবিত শুল্ক, রেগুলেটরি ও ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার আমদানিতে একই শুল্কহার রাখা, হোটেলের মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বলবৎ রাখার পাশাপাশি প্লাস্টিকের খেলনার উপকরণ আমদানিতে ডিউটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

মূসক খাতে পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ীদের টার্নওভারের ওপর দেড় শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ ভ্যাট আরোপ, রফতানিমুখী রিসাইকেলড ফাইবার স্পিনিং মিলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, জমি রেজিস্ট্রেশনের উৎসে কর ৮ শতাংশের পরিবর্তে আগের ৪ শতাংশে বহাল রাখা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উপকরণ-কাঁচামাল ও প্রিন্টিং-প্যাকেজিং এবং বাইন্ডিং সরবরাহকারীদের উৎসে করের আওতাবহির্ভূত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেট সামগ্রীর মূসক আগের মতো ৫ শতাংশ রাখা উচিত বলে মনে করছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সুপারিশে দেশে উৎপাদিত পিভিসি পাইপের ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মূসক আরোপ করা, বল পয়েন্ট কলমের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার, সফটওয়্যার উৎপাদন পর্যায়ে ও কাস্টমাইজেশন সেবার ওপর মূসক প্রত্যাহার ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী ও তৈজসপত্রের ওপর আগের মতো ভ্যাট বহাল রাখার দাবি জানানো হয়েছে।

আরও