৩১ শতাংশ পর্যন্ত কমবে এলএনজি সরবরাহ

দেশজুড়ে গ্যাসের তীব্র সংকট

দেশে গ্যাসের মজুদ ক্রমেই কমে আসছে। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে জ্বালানি নিরাপত্তা। দেশজ অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পথে হাঁটতে শুরু করে। এ আমদানিনির্ভরতা ক্রমে বাড়ছে।

দেশে গ্যাসের মজুদ ক্রমেই কমে আসছে। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে জ্বালানি নিরাপত্তা। দেশজ অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পথে হাঁটতে শুরু করে। এতে আমদানি নির্ভরতা ক্রমে বাড়ছে।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দুটি টার্মিনালের একটি মেরামতে যাচ্ছে পহেলা নভেম্বরে। এর কারণে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ ৩১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। এরই মধ্যে গ্রিডে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ কমে গিয়েছে। এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে প্রভাব পড়েছে সিএনজি স্টেশন ও বাসা-বাড়িতেও।

স্থানীয়ভাবে উত্তোলনকৃত গ্যাসের পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গড়ে সর্বোচ্চ ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হতো। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৬০ কোটি ঘনফুটে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাসমান দুটি টার্মিনালের মধ্যে এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনে থাকবে না। পহেলা নভেম্বর থেকে ভাসমানটি সরিয়ে নেয়া হবে। এরফলে ওই টার্মিনালটি থেকে যে পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ হতো সেটি পাওয়া যাবে।

টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর অন্তত টার্মিনালের কারিগরি ক্রুটি ও মেরামত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় দেড় মাস সময় লাগে।

এছাড়া এক্সিলারেটের টার্মিনালের বিদ্যমান সক্ষমতার চেয়ে আরো ১০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতা বাড়ানো হবে। সব মিলিয়ে টার্মিনালটি উৎপাদনে থাকবে না প্রায় দুই মাস।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, এক্সিলারেট এনার্জির শিডিউল রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে জন্য দেড় মাস এবং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আরো ১৫ দিন, মোট দুই মাস এলএনজি সরবরাহের বাইরে থাকবে। এ সময় একটি টার্মিনাল দিয়ে ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাবে। এ সময় কিছুটা গ্যাসের সংকট থাকবে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, নিয়মিত মেরামতে অংশ হিসেবে একটি এফএসআরইউ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ফলে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ঘনফুট থাকবে দেড় থেকে দুই মাস। এ পরিস্থিতি আগামী দেড় থেকে দুই মাস গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হবে। তবে টার্মিনাল পুনরায় প্রতিস্থাপন করা গেলে ধীরে ধীরে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে।

দেশে দুটি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। এর একটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি সামিট গ্রুপ, অন্যটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। দুটি টার্মিনালের সক্ষমতা দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট। তবে দুটি টার্মিনাল থেকে সর্বোচ্চ সরবরাহ পাওয়া যায় দৈনিক ৯০ কোটি ঘনফুট। যদিও এলএনজি আমদানি সংকটে সারা বছরে গড়ে ৭০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ পাওয়া যায়।

সোমবার (২২ অক্টোবর) সরবরাহ অনুযায়ী বর্তমানে স্থানীয় গ্যাস ও এলএনজি মিলিয়ে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ২৬৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়েছে। এরমধ্যে ৬০ কোটি ঘনফুট এলএনজি।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনে (বিটিএমএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ফজলুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানাগুলোর অবস্থা সাংঘাতিক খারাপ। কোনো ভাবেই ১২ ঘণ্টার বেশি কারখানা চালানো যাচ্ছে না। গ্যাসের প্রেশার শূন্যে নেমে আসছে কখনো কখনো। বেশিরভাগ কারখানা মালিকরা এ পরিস্থিতিতে আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, গ্যাস ছাড়া সিরামিক শিল্প কল্পনাই করা যায় না। বর্তমানে ঢাকা ও গাজীপুরে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সিরামিক কারখানা গ্যাসের অভাবে উৎপাদন সংকটে পড়েছে। সিরামিক শিল্প অবর্ণনীয় ও ভীতিকর পরিস্থিতির ভিতরে রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, নভেম্বর থেকে দুই মাস গ্রিডে ৫০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ হবে। স্থানীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে বাড়তি সরবরাহ যোগান দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ স্থানীয় ফিল্ডগুলোরও উৎপাদন ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তবে শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা যেহেতু কমে যায়, ফলে সেখানে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা কম দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হবে।


 


 


 

আরও