যুদ্ধ-সংঘাতময় এলাকায় বহুলাংশে ব্যর্থ হয়েছে মানবিক করিডোর

২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা অবরোধের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। সে সময় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট বলেন, ‘আমি গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দিয়েছি।

২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা অবরোধের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। সে সময় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট বলেন, ‘আমি গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দিয়েছি। বিদ্যুৎ থাকবে না, খাবার থাকবে না, জ্বালানি থাকবে না, সবকিছু বন্ধ।’ এমন পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক সহায়তায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় জরুরি পদক্ষেপ। উদ্যোগ নেয়া হয় ‘মানবিক করিডোর’-এর। যদিও সফলতার মুখ দেখেনি সে উদ্যোগ। একইভাবে ২০২২ সালের মার্চে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর পূর্ব ইউক্রেনের মারিউপোল ও ভলনাভাখা করিডোর দিয়ে প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার বাসিন্দাকে সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ৫ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিরাপত্তা বিবেচনায় সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

মানবিক করিডোর নিয়ে সর্বশেষ আলোচনায় আসে বাংলাদেশের নাম। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যটি তীব্র দুর্ভিক্ষের আসন্ন হুমকির মুখোমুখি। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে একটি মানবিক করিডোর দিয়ে সেখানে ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর জাতিসংঘের পরিকল্পনায় সম্মতি জানিয়েছে ঢাকা। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেগুলো মানা হলে গৃহযুদ্ধের মধ্যে থাকা রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর জন্য মানবিক করিডোর ব্যবহার করতে দেয়ার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্তে অবশ্য শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি একটা শঙ্কা দেখি। প্রথমত, মানবিক করিডোর বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটি কেউ খুলে বলেনি। কথা যা হচ্ছে অনুমানের ওপর নির্ভর করে, সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও বলা হয়নি। কী ধরনের করিডোর, কোথা থেকে কোথায় যাবে? কে আসবে, কে যাবে? পাহারায় কে থাকবে, ব্যবস্থাপনায় কে থাকবে—কোনো কিছুই আমরা জানি না, সরকারের অনেক কর্মকর্তাও জানেন না। বিভিন্ন নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও জানে না। যেন একটা অদ্ভুত বিষয়।’

করিডোরটি দ্বিমুখী হবে কিনা, সে ভয়ও রয়ে গেছে জানিয়ে আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আরাকানের দিকে জাতিসংঘ কী পাঠাবে? আবার আরাকানের দিক থেকে কেউ আসবে কিনা। আর এটা হলে বাংলাদেশের বিপদ আছে। কেননা এতে বাকি রোহিঙ্গারাও চলে আসতে পারে। এটা একটা শঙ্কার দিক। তবে এটা কিন্তু অনুমাননির্ভর।’

নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে অসামরিকীকরণ করাকেই মূলত মানবিক করিডোর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেখান দিয়ে খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনের সুযোগ দেয়া হয়। বেসামরিক, আহত বা অসুস্থদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ারও সুযোগ করে দেয় এ করিডোর। জাতিসংঘ মানবিক করিডোরগুলোকে সশস্ত্র সংঘাতের সাময়িক বিরতির সম্ভাব্য কয়েকটি রূপের মধ্যে একটি বলে মনে করে। তবে সশস্ত্র সংঘাতের উভয় পক্ষই এতে সম্মত হয়। তীব্র যুদ্ধ ও সংঘাত রয়েছে এমন স্থানে অবশ্য বেসামরিক করিডোর বা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান বৃথা গেছে। উদাহরণস্বরূপ ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ, জাতিসংঘ এখন পর্যন্ত তার আলোচনায় ব্যর্থ হয়েছে।

যুদ্ধ-বিগ্রহ কিংবা সংঘাতের সময় মানবিক করিডোরের ব্যবহার শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। সে সময় তথাকথিত কিন্ডারট্রান্সপোর্টের নামে নাৎসি নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার করিডোর দিয়ে ইহুদি শিশুদের যুক্তরাজ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৯২-৯৫ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার যুদ্ধেও এ করিডোর ব্যবহার হয়। এছাড়া ২০১৮ সালে সিরিয়ার গৌতা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও তৈরি করা হয়েছিল মানবিক করিডোর।

সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সংঘাতের কারণে হুমকির মুখে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের সহায়তা করার জন্য মানবিক করিডোরগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটি ইথিওপিয়ায় ঘটেছে। দেশটির টাইগ্রে অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ মাসের পর মাস সরকারি অবরোধে আটকে পড়ে। শুধু ২০২২ সালের নভেম্বরে মানবিক করিডোরগুলো পুনরায় চালুর মধ্য দিয়ে তাদেরকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়।

এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমানের বৈঠক হয়। সেখানেই প্রথম মানবিক করিডোরের বিষয়টি উত্থাপন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত, কারণ এটা হিউম্যানিটারিয়ান একটা প্যাসেজ হবে। কিন্তু এতে আমাদের কিছু শর্তাবলি আছে, যেগুলোর ডিটেইলসে আমি এখন যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা এতে অবশ্যই কো-অপারেট করব, অবশ্যই ইউএনের তত্ত্বাবধানে।’

হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাখাইনে দুর্ভিক্ষপ্রবণ অবস্থা বিরাজমান। সেখানে দুর্ভিক্ষ হলে অনেক বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। রাখাইনে কিছু রোহিঙ্গা আছে, রাখাইনিরাও আছে। দুর্ভিক্ষ হলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার মানুষ যেখানে খাবার আছে সেখানে যাবে। সুতরাং পূর্বপ্রতিকারমূলক একটা ব্যবস্থা হিসেবে যদি আগে থেকে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে সম্ভাব্য বিপর্যয় সামলানোর সুযোগ থাকে। এ প্রেক্ষাপটেই মানবিক একটা চ্যানেলের বিষয় জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের আলোচনা চলছে। এ প্যাসেজ ব্যবহার করবে হিউম্যানিটারিয়ান এজেন্সিস, যারা অপারেটর হিসেবে কাজ করবে।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর জন্য মানবিক করিডোর স্থাপনে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত। যার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব জড়িত। এছাড়া জড়িত রয়েছে এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা। এসব দিক বিবেচনায় সরকারের উচিত ছিল এ বিষয়টা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু তারা এটা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির গত সোমবারের বৈঠকেও মানবিক করিডোরের বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রতিক্রিয়া জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, গৃহযুদ্ধে জর্জর মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর জন্য মানবিক করিডোর দেয়ার মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত কোনো অনির্বাচিত সরকার নিতে পারে না। এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্ন জড়িত।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে জানতে চাইব, মানবিক করিডোরের বিষয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে কিনা? হলে তাতে কী শর্ত আছে, কেনই-বা এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। তাদের বক্তব্য জানার পর আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করব। একটি ম্যান্ডেটহীন অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষে এত বড় জাতীয় সিদ্ধান্ত নেয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’

রাখাইন রাজ্যটি বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এমনও আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ আসলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে কিনা? এ বিষয়ে ২৭ এপ্রিল ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আমাদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টা পরে, কিন্তু দেশটির অভ্যন্তরীণ সংঘাত তো আমাদের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কারণ মিয়ানমারের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদেরকে আমরা ফেরত পাঠাতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের যা কিছু করা প্রয়োজন সেটা তো করতেই হবে। আমরা অফিশিয়ালিও বলেছি, বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্তের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়ে গেছে, এটা তো আমরা অস্বীকার করতে পারব না। একটি নন-স্টেট অ্যাক্টর আমাদের সঙ্গে থাকা সীমান্ত (রাখাইন) নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই সেখানে। তবে একটা নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে আমরা অফিশিয়াল যোগাযোগ অবশ্যই করতে পারি না, কিন্তু আবার আমরা চাইলেও বিচ্ছিন্ন থাকতে পারব না। কাজেই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই কোনো না কোনো ধরনের যোগাযোগ, অন্তত যতটুকু প্রয়োজন, সেটুকু অবশ্যই করব।’

ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। দেশটির সামরিক জান্তা সরকার ও চীনের রাষ্ট্রমালিকানাধীন সিআইটিআইসি রাজ্যটিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার কাজ জোরদার করতে একমত হয়েছে। এ বিষয়ে ২০২৩ সালে দুই পক্ষ একটি চুক্তি করে। অন্যদিকে কালাদান মাল্টি-মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের পাশাপাশি মিয়ানমারে ভারতের কৌশলগত বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক নির্মাণ।

রাখাইনে পরাশক্তিগুলোর আগ্রহের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাখাইন অঞ্চলে চীনের সরাসরি বিনিয়োগ আছে। তারা এ ব্যাপারে আগ্রহী। ভারতেরও কোচিন প্রদেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। কাজেই করিডোরের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পাশাপাশি সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কীভাবে এটা ব্যবহার হবে, এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, চূড়ান্ত বিবেচনায় কারা উপকৃত হবে এবং সময় অর্থাৎ কতদিনের জন্য সেটা—তা লিপিবদ্ধ করে রাখতে হয়। চুক্তির মতো করতে হবে। তবেই সেটা সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরপরও মনে রাখতে হবে, এটা যেহেতু সংঘাতপ্রবণ এলাকা এখানে সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মাধ্যমে আলোচনা করতে হবে। ভূমিটা যাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কার্যকারিতার জন্য তাদের সঙ্গেও আলোচনা জরুরি, সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক না কেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে।’

আরও