রাজশাহীতে পানিস্বল্পতায় আমের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা চাষীদের

এপ্রিল খরাপ্রবণ মাস। এ মাসে বৃষ্টিপাতও তেমন একটা হয় না। এমনিতে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট রয়েছে।

এপ্রিল খরাপ্রবণ মাস। এ মাসে বৃষ্টিপাতও তেমন একটা হয় না। এমনিতে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট রয়েছে। এ সময়টাতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে, যার প্রভাব পড়ে আম উৎপাদনে। চলতি মৌসুমে রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর বাগানে আমের ফলন এসেছে। তবে পানিস্বল্পতার কারণে গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও কালচে দাগ পড়ছে। কীটনাশক স্প্রে করার পরও সুফল মিলছে না। আমও ঝরে পড়ছে বেশি। এ অবস্থায় ঝড়-শিলাবৃষ্টি ও তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা দিলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

অবশ্য কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো কোনো বছর আমের উৎপাদন বেশি হলে পরের বছরে হয় কম। এ প্রক্রিয়াকে কৃষিবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘অলটারনেট বেয়ারিং’। গত বছর ছিল ‘অফ ইয়ার’। আমের উৎপাদন ছিল কম। এবার ‘অন ইয়ার’, তাই গাছে গাছে দেখা মিলেছে মুকুল। গুটি এসেছে বেশ। এবার গত বছরের তুলনায় ৩০ টন আম উৎপাদন বেশি হতে পারে। দুই-তিনদিনের মধ্যে মাঝারি বৃষ্টি হলে গুটি ঝরে পড়া বন্ধ হবে। কালবৈশাখী কিংবা তীব্র তাপপ্রবাহ না হলে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় আমের বাগান ছিল ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৮ টন। চলতি মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩ টন।

আবহাওয়া অনুকূল থাকলে উৎপাদন আরো বাড়বে। তবে ঝড়-শিলাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের কারণে গাছ থেকে আম ঝরে পড়লে ঘটবে ফলন বিপর্যয়। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূল থাকায় আশা করা যাচ্ছে ফলন দ্বিগুণের কাছাকাছি হবে এবং আমের বাজারও গত বছরের তুলনায় বাড়বে বলে ধারণা কৃষি কর্মকর্তাদের।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোছা. সাবিনা বেগম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর গাছে মুকুল আসার হার বেশি। এ বছর তেমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগও হয়নি। আশা করছি ফলন ভালো হবে এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব। এ বছর প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।’

গুটি ঝরে পড়া রোধে কৃষকদের সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এপ্রিল মাস খরাপ্রবণ। এ সময়ে আমরা কৃষকদের গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ, কীটনাশক প্রয়োগ, গাছে পানি স্প্রে ও মালচিং করার পরামর্শ দিচ্ছি। যদি দুই-তিনদিন বৃষ্টি হয়; পরবর্তী সময়ে গাছে হপার পোকাসহ ছত্রাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

রাজশাহীর পবা উপজেলার তারেক আলী এক দশক ধরে আম চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চৌবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিয়নের চাকরির পাশাপাশি আট বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন তিনি। তার বাগানে রয়েছে গোপালভোগ, লখনা, হিমসাগর, রানীপছন্দ, ল্যাংড়া, ফজলি জাতের আমগাছ। আট বিঘা জমিতে রয়েছে ১৭৫টি গাছ। গত বছর এসব গাছ থেকে পেয়েছেন ৩০০ মণ আম। খরচ বাদ দিয়ে তাতে লাভ করেছেন ২ লাখ টাকা। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।

একই গ্রামের আল ইব্রাহিম টুটুল পড়ালেখার পাশাপাশি আমের ব্যবসা করেন। গত বছর দুটি বাগান লিজ নিলেও এবার আরো একটি যুক্ত করেছেন। আল ইব্রাহিম বলেন, ‘গতবারের তুলনায় আমের ফলন এবার বেশি। তবে রোগবালাই বেশি। পানিস্বল্পতার কারণে আমগাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও কালচে দাগ পড়ছে। কীটনাশক স্প্রে করার পরও সুফল মিলছে না। আমও ঝরে পড়ছে বেশি। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকটের কারণেই এমন সমস্যা। তবে বৃষ্টি হলে কিছুটা পরিত্রাণ মিলবে।’

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহীর সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত বছর জেলায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার আমের বাজার গিয়েছে। এ বছরে তার দ্বিগুণ বা বেশিও হতে পারে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিলে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’

আরও