২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৯ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৯ হাজার টন। এর আগে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪৪ লাখ টন। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে সবজির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫৪ লাখ টন। এ সময়ের ব্যবধানে সবজির আবাদ এলাকা বেড়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে নয় লাখ হেক্টর জমিতে সবজির উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার টন। প্রতি বছরই সবজির উৎপাদন বাড়ছে। তবে সেখানে শীতকালীন সবজির প্রাধান্য রয়েছে। দেশে দুই মৌসুমে সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে শীতকালীন সবজি ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার টন আর গ্রীষ্মকালীন সবজি ছিল ৫৯ লাখ ৬০ হাজার টন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবীর বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজিতে আবহাওয়াগত ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতেই জমির পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়, ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সেচের জন্য খরচও করতে হয়। এটি যারা পারে না তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। আবার সবজি ওঠার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা ও ঝড়ের প্রভাব পড়ে। যার ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। এছাড়া বীজ ও চাষ পদ্ধতিতে উন্নত প্রযুক্তির ঘাটতি তো রয়েছেই। আবার সবজিতে পোস্ট হারভেস্ট লস এখনো উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তাই আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে সমভূমিতে সবজি চাষ ছাড়াও বাড়ির আঙিনায়, বাড়ির ছাদে, পানিতে মাচায়, ঘরের চালে, চরভূমিতে, উপকূলীয় অঞ্চলে ভাসমান এবং হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা যেতে পারে। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ভালো বীজ সম্পর্কে ধারণা এবং উন্নত চাষ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি কৃষকের কাছে দ্রুত পৌঁছাতে হবে।
গতকাল সচিবালয়ের কৃৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় সবজি মেলা ২০২২ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেছেন, গত ১২ বছরে সবজির উৎপাদন প্রায় সাত গুণ বেড়েছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে। এ তালিকায় চীন প্রথম, ভারত দ্বিতীয়। জিডিপির ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। দেশে এখন চাষাবাদ হয় ১০০ প্রজাতির সবজি। দেশে সবজির আবাদ বাড়ানোর জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ শুরু হচ্ছে জাতীয় সবজি মেলা ২০২২। রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী এ মেলা। ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মেলা চলবে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত। মেলায় ৫২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। এ বছর জাতীয় সবজি মেলার প্রতিপাদ্য ‘নিরাপদ সবজি চাষ, স্বাস্থ্য পুষ্টি বারো মাস’। কেআইবি অডিটোরিয়ামে ‘পুষ্টি নিরাপত্তা ও কৃষি রূপান্তরে সবজির অবদান’ বিষয়ক একটি সেমিনারও অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক।