মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যাত্রীসেবায় ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার একটি আদেশ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। দুই-একদিনের মধ্যেই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিকভাবে গত ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচলের কথা। তখন ভাড়া হবে ১০০ টাকা।
বর্তমান ভ্যাট আইন অনুযায়ী, যেকোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিধান আছে। ঢাকার মেট্রোরেল পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং এটি একটি গণপরিবহন। সে কারণেই মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট আরোপের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী চিঠি দেন। ওই চিঠিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ হিসেবে মেট্রোরেলে চলাচলকারী যাত্রীদের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়। সে অনুযায়ী ভ্যাট বসানো হলে মেট্রোরেলের টিকিটের দাম বাড়ত। অর্থাৎ ৬০ টাকার টিকিটের দাম দাঁড়াত ৬৯ টাকায়।
এদিকে মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা মেট্রোরেল কোম্পানি চিঠির জবাব দেয়। তাতে বলা হয়, মেট্রোরেলে অভিজাত শ্রেণীর যাত্রী ভ্রমণ করে না, সব শ্রেণীর মানুষ একই ভাড়া দিয়ে ওঠে। তাই এ ধরনের পরিবহনে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে না। ভাড়া নির্ধারণেও সরকার জনগণের আর্থিক সমার্থ্যকে প্রাধান্য দিয়েছে। এছাড়া সরকার মেট্রোরেলে যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা দিচ্ছে।
ডিএমটিসিএল আরো জানায়, বিভিন্ন দেশের মেট্রোরেল পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, শুধু ভাড়ার আয় দিয়ে লাভজনকভাবে মেট্রোরেল পরিচালনা করা অসম্ভব। তাই মেট্রোরেলের পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করা হয় সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে। এ প্রেক্ষাপটে এমআরটি লাইন-৬-এর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে ১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধও করা হয়েছে।
মেট্রোরেল কোম্পানি আরো জানায়, ঢাকা মহানগরীর যানজটের বার্ষিক প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এমআরটি নেটওয়ার্ক চালু হলে এ অর্থের সাশ্রয় হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাশ্রয়কৃত অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি জানায়। ডিএমটিসিএলের কাছ থেকে এ জবাব পাওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা চেয়ে এনবিআরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মেট্রোরেল যেহেতু সরাসরি সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান এবং অলাভজনক, তাই এর ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া গণপরিবহনটি এখনো পুরোপুরি চলাচল শুরু করেনি এবং এখনো খুব বেশি জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি। তাই মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর এখনই ভ্যাট আরোপ করলে তার বোঝা সাধারণ মানুষের কাঁধেই গিয়ে পড়বে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আগামী বছরও এ সুবিধা চাইলে এনবিআর তা বহাল রাখবে কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তখনকার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা-ই হবে। এ বিষয়ে অগ্রিম কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড বা মেট্রোরেল কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলে এখন প্রতিদিন আট-নয় হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়। আর একদিনে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৫ হাজারের বেশি যাত্রী মেট্রোরেলে চড়েছে।