বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাঙ্গালী নদী। দুই পাড়েই রয়েছে জনবসতি। নদীর পশ্চিম তীরে রয়েছে ১৩টি গ্রাম আর পূর্ব পাড়ে ১৮টি। এসব গ্রামের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে আট কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। এতে সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়ছে। তিন দশক ধরে নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দরা। বিভিন্ন সময় জনপ্রতনিধিরা আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, হলিদাবগার পাশেই মোনারপটল খেয়াঘাট। এ ঘাট হয়েই প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে। সেতু অভাবে শুষ্ক, বর্ষা ও শীত মৌসুমে দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। আট কিলোমিটার ঘুরে সদর উপজেলা ও জেলা পরিষদে যাতায়াত করতে হয় তাদের।
সোনাতলা উপজেলার হলিদাবগা গ্রামের রোস্তম আলী মণ্ডল, ডা. আজাহার আলী ও তরিকুল আলম স্বপন জানান, গ্রামবাসীর উদ্যোগে বাঙ্গালী নদীতে সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় নদীর দুই পাড়ের ১২ গ্রামের মানুষ। গ্রামবাসীর কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে বাঁশ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ২০০ বাঁশ দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণ করতে প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সাঁকোটির কারণে আশপাশে প্রায় ১২টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি আপাতত দূর হলো।
স্থানীয়রা জানান, খেয়াঘাট দিয়ে সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার লোকজন যাতায়াত করে। সেতুর কারণে কৃষিপণ্য সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এ অঞ্চলে ধান, আলু, সরিষা, ভুট্টা, কাঁচামরিচ, শুকনা মরিচ, পাটসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ও ফুল আবাদ বেড়েছে। এসব পণ্য হাটে নিতে হয় আট কিলোমিটার পথ ঘুরে। খেয়াঘাটের দুই পাশে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের কয়েকজন সবজিচাষী জানান, শীত মৌসুম আসছে। এখন শীতের সবজির পাশাপাশি আলু ও সরিষা চাষের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ফলন তোলার পর সবজি বা আলু আট কিলোমিটার ঘুরে বাজারে নিতে হবে। সেতু থাকলে অতিরিক্ত খরচ হতো না। দুই পাড়ের মানুষ একাধিকবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। বাধ্য হয়ে তারা স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ করেছে।
এ ব্যাপারে জোড়গাছা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী জানান, খেয়াঘাটের পাশে একটি হাট রয়েছে। খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণ করা হলে এটি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হবে। কৃষিপণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। আপাতত স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো তৈরি করে চলাচল শুরু করেছে। সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বলা হবে।’
সোনাতলা উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মাহবুবুল হক জানান, বাঙ্গালী নদীতে বন্যার সময় ভাঙন থাকে। নদীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব প্রায় ৩০০ মিটার। স্থানীয়দের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে সেখানে সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করতে বড় বাজেট প্রয়োজন হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হবে।