কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারির পর্যায়ে পৌঁছানোয় পৌর প্রশাসন পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
মারা যাওয়া চারজন হলেন— ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আলি আহমেদের স্ত্রী ফারজান আক্তার, দোনারচর গ্রামের মান্নানের ছেলে ইউসুফ আলী, নাজির চৌধুরীর স্ত্রী মাকসুদা বেগম ও রাসেলের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার।
পৌর স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দোনারচর, সবজিকান্দি, দাউদকান্দি, সাহাপাড়া, বলদাখাল ও তুজারভাঙ্গা গ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। প্রতিটি পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন। দুই ওয়ার্ডে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত দাউদকান্দি উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ৩০০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে কুমিল্লার তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছেন। এ কারণে পুরো পৌরসভা এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন খন্দকার সুমন বলেন, তার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঝোপঝাড় পরিষ্কার, জমে থাকা পানি নিষ্কাশন ও ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তিনি জানান, তার ওয়ার্ডসহ পাশের ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন সরকার জানান, তার ওয়ার্ডে ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন আরো শতাধিক মানুষ।
পৌরসভার সমাজকর্মী তৌফিক রুবেল বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও ওষুধ ছেটানোর কার্যক্রম চলছে।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ জানান, জুন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৮ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ২৫৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রস্তুত রয়েছে।
দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক (ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে দুটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিদিন মশার বিস্তার রোধে মশক নিধন কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে ও ফগার মেশিন দিয়ে উচ্চমাত্রার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।