ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন

উদ্বোধনী দিনের পর আর আসেনি ডিজেল

ভারত থেকে জ্বালানি তেল ডিজেল আমদানিতে দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। চলতি বছরের ১৮ মার্চ পাইপলাইনটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিনই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে আসে ১ হাজার ৯৩০ টন ডিজেল। এটি চালু হওয়ার পর আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও নতুন করে এ লাইন দিয়ে আর কোনো জ্বালানি তেল

ভারত থেকে জ্বালানি তেল ডিজেল আমদানিতে দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। চলতি বছরের ১৮ মার্চ পাইপলাইনটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিনই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে আসে ১ হাজার ৯৩০ টন ডিজেল। এটি চালু হওয়ার পর আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও নতুন করে এ লাইন দিয়ে আর কোনো জ্বালানি তেল আসেনি। যদিও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানির কার্যক্রম দ্রুতই পূর্ণমাত্রায় চালু হবে।

ভারত থেকে ডিজেল আমদানির জন্য দিনাজপুরের পার্বতীপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে ফুয়েল ট্যাংক। এ ট্যাংকের কাজ আগামী ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানি কার্যক্রমে পাইপলাইন উদ্বোধনের আগে ভারত থেকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিজেল আসত। তবে এখন পাইপলাইন প্রস্তুত হলেও ডিজেল আসতে কেন বিলম্ব হচ্ছে তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি বিপিসি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। 

ডিজেল আমদানিসংক্রান্ত বিষয়টির তত্ত্বাবধান করছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল একবারই এসেছে। উদ্বোধনী দিনের পর এ লাইনে আর কোনো ডিজেল আসেনি। কাস্টমস-সংক্রান্ত কিছু জটিলতা ছিল, সেগুলোর এখন সমাধান হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, চাহিদাপত্র পাঠানো হলে জ্বালানি তেল পাঠাবে নুমালিগড় রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ। সবকিছু প্রস্তুতও রয়েছে। 

তবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সালেহ ইকবাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাইপলাইনের টেস্টিং হিসেবে এক দফা ভারত থেকে ডিজেল এনেছি। ডিজেল আমদানি নিয়মিত করার জন্য যাবতীয় কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রস্তুতিও সেভাবে চলছে। আমাদের ডিপোগুলোর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ পুরো কাজ শেষ হলে এরপর থেকে পূর্ণমাত্রায় পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি চলবে।’

পাইপলাইনে ভারত থেকে ডিজেল আমদানির আগে রেলের ওয়াগনের মাধ্যমে এটি আমদানি করত বিপিসি। এতে সময় ও পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। পাইপলাইনে ডিজেল আমদানির ক্ষেত্রে একদিকে খরচ কম, তেমনি সময়ও বাঁচবে বলে জানান জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, বিদেশ থেকে ডিজেল আমদানিতে প্রতি ব্যারেলে প্রিমিয়াম চার্জ পড়ে প্রায় ১১ ডলার। সেখানে ভারত থেকে পাইপলাইনে আমদানি করা ডিজেলে খরচ হবে সাড়ে ৫ ডলার। সেই হিসাবে বছরে আড়াই লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ কমবে প্রায় ৮০-৯০ কোটি টাকা। 

ভারত থেকে ডিজেল আমদানি চুক্তি ১৫ বছর মেয়াদি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে পাইপলাইনটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং হচ্ছে। এর কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হলে অথবা চুরির মতো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যাবে। এমনকি স্থান নির্ণয় করাও সম্ভব হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানির জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিলে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই হয়। একই বছরের অক্টোবরে আসামের জ্বালানি সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) বাংলাদেশে ডিজেল রফতানির জন্য বিপিসির সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি আরেকটি চুক্তি করে। এরপর ২০২০ সালের মার্চে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। এ পাইপলাইন বাস্তবায়নের জন্য এনআরএল ও বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। এ প্রকল্পে ভারত সরকার ৩৭৭ কোটি রুপি অর্থায়ন করে। পাইপলাইনটির বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতে ৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশের লাইনটি পঞ্চগড়, নীলফামারী হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে প্রবেশ করেছে। আর ভারত অংশের জন্য এনআরএল ৯১ দশমিক ৮৪ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশ অংশের জন্য ২৮৫ দশমিক ২৪ কোটি রুপি অনুদান হিসেবে দিয়েছে ভারত সরকার।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে স্টোরেজ করার জন্য ৬ দশমিক ৮০ একর জমির ওপর ২৮ হাজার ৮০৯ টন ধারণক্ষমতার ছয়টি ফুয়েল স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া অগ্নিনির্বাপণের জন্য তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতার দুটি পানির ট্যাংকও নির্মাণ করা হচ্ছে। পার্বতীপুর ডিপোর বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার টন। পাইপলাইনে সবসময় ৬৭ লাখ লিটার তেল মজুত থাকবে। প্রথম তিন বছরে আড়াই থেকে তিন লাখ টন তেল আনা হবে। পরে তা পর্যায়ক্রমে ৫ থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত হবে।

দেশে প্রতিবছর বিপিসি ৬০-৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টন ডিজেল ভারত থেকে আসে। বর্তমানে যে পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে, এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বছরে ১০ লাখ টন পর্যন্ত জ্বালানি তেল আমদানি করা যাবে।

পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে বিপিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও