নওগাঁয় টুপি বুনন শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে

নওগাঁয় টুপি বুনন শিল্পকে কেন্দ্র করে নারীর কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়ছে। এ শিল্পের ৯০ শতাংশ কাজই করছেন নারী শ্রমিকরা।

নওগাঁয় টুপি বুনন শিল্পকে কেন্দ্র করে নারীর কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়ছে। এ শিল্পের ৯০ শতাংশ কাজই করছেন নারী শ্রমিকরা। পুরো জেলায় বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি নারী এ পেশায় নিয়োজিত। বিসিকের তথ্য বলছে, রফতানিযোগ্য টুপি বুনন শিল্পে প্রায় অর্ধ লাখ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এ শিল্প থেকে প্রতি বছর অন্তত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। অবসর সময়ে টুপি তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে এ শিল্পে নিয়োজিত নারীদের। তাদের তৈরি এসব টুপি রফতানি হচ্ছে ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

সম্ভাবনাময় এ খাতকে আরো এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি নারী কারিগরদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

উদ্যোক্তারা বলছেন, রফতানিযোগ্য এসব টুপিতে চেইন, দেওয়ান, বোতাম, গুটি দানা ও মাছ কাটা নামে পাঁচ ধরনের সেলাই করা হয়। আকর্ষণীয় এসব টুপি ওমানের জাতীয় টুপি নামে পরিচিত হলেও সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা রয়েছে। এসব দেশে প্রতি বছর নওগাঁ থেকে শত কোটি টাকার টুপি রফতানি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

নওগাঁ শহরের আয়মান হস্তশিল্পের স্বত্বাধিকারী জীবন আহম্মেদ সুজন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র এ শিল্পে ৯০ শতাংশ কাজই করেন নারী শ্রমিকরা। পুরো জেলায় বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি নারী এ পেশায় নিয়োজিত। পুরুষরা এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। আমার অধীনে ৬ হাজারের বেশি নারী শ্রমিক টুপি তৈরির কাজ করছেন। ঈদ ঘিরে প্রায় ১ কোটি টাকার টুপি ওমানে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ টুপি রফতানি হয়েছে। বাকিগুলো পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র এ শিল্পে কাজের মানভেদে প্রতিটি টুপির দাম নির্ধারণ করেন বিদেশীরা। নকশাগুলো যত বেশি নিখুঁত হবে, তত বেশি দামে ওমানে টুপি বিক্রি করা সম্ভব। তবে আমাদের নারী শ্রমিকরা দক্ষতার অভাবে পিছিয়ে পড়ছেন। উদ্যোক্তারাও পুঁজি সংকটে ব্যবসা প্রসারিত করতে পারছেন না। এ সংকট সমাধানে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার।’

সরজমিন নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে দেখা গেছে, গ্রামের নারীরা বাড়ির উঠানে বসে দলবদ্ধভাবে টুপি তৈরি করছেন।

ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের লিপি বেগম বলেন, ‘ভালো মানের একটি গুটি দানা টুপি তৈরিতে ১৫-২০ দিন সময় লেগে যায়। সংসারে কাজের পাশাপাশি টুপি তৈরি করে মানভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাই। অবসর সময়ের এ আয় থেকে কৃষক স্বামীকে সহযোগিতা করতে পারছি। সারা বছর উপার্জিত টাকা থেকে নিজের পছন্দের জিনিসপত্র কেনাসহ সন্তানের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালাতে পারছি।’

সাবানা বেগম বলেন, ‘প্রতিবেশীদের দেখে পাঁচ বছর আগে টুপি সেলাইয়ের কাজ শিখেছিলাম। এখন সেই কাজকেই পেশা হিসেবে নিয়েছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি টুপি সেলাই করে আমি নিজেই এখন স্বাবলম্বী।

এ ব্যাপারে নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থ্যাপক শামীম আক্তার মামুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ফিলিপাইন ও ভারতের যেসব নারী এ শিল্পে সম্পৃক্ত, তাদের তুলনায় আমাদের এ অঞ্চলের নারীরা দক্ষতায় পিছিয়ে রয়েছেন। এ কারণে তারা কম পারিশ্রমিক পান। তবে মজুরি বৈষম্য দূর করতে নারীদের প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

আরও