আগামী তিন অর্থবছর ভ্যাট থেকে ৫ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য এনবিআরের

ভ্যাট খাত থেকে আগামী তিন অর্থবছরে (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬) প্রায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বৈঠকেও ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেছেন এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয় করা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভরশীল। এসব শর্তের কারণে চাইলেও শিগগিরই এনবিআরের পক্ষে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব হবে না।

ভ্যাট খাত থেকে আগামী তিন অর্থবছরে (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬) প্রায় লাখ ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বৈঠকেও ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেছেন এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয় করা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভরশীল। এসব শর্তের কারণে চাইলেও শিগগিরই এনবিআরের পক্ষে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব হবে না।

এনবিআর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্যাট থেকে লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লাখ ৭০ হাজার কোটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে লাখ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে চায় সংস্থাটি। এছাড়া চলতি অর্থবছরে লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার মতো ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আইএমএফকে জানিয়েছে এনবিআর। যদিও চলতি অর্থবছরে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে গত কয়েক বছরে ভ্যাট আদায়ের ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে। তবে প্রবৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঘাটতি থাকবে সংস্থাটির।

রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে সংস্থাটিকে এখন নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী অর্থবছরে লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ভ্যাট থেকে আহরণ হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর। যদিও সংস্থাটির ভ্যাট উইংয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ অর্থবছরের মতো প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাত থেকে লাখ ৩৯ হাজার ১০০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আয় হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রেও রাজস্ব আয়ে ঘাটতি থেকে যাবে হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

এনবিআরের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেয়া রয়েছে রিটেইল সার্ভিস সেক্টরে। ঘাটতি পূরণের জন্য বর্তমানে রিটেইল সেক্টরে ইএফডি এবং এসডিসি মেশিন ইনস্টলেশনে গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থাটি।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাট আয় বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে অডিট। এজন্য রয়েছে এনবিআরের বিশেষায়িত ইউনিট ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তর। সংস্থাটির মূল কাজই হচ্ছে ঝুঁকি যাচাই করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত অডিটের মধ্যে আনা। সংস্থার পাশাপাশি প্রত্যেক ভ্যাট কমিশনারেটও অডিট পরিচালনা করে। এছাড়া ভ্যাট আয়কর কমিশনারেটও নিজেদের মধ্যে অডিটের তথ্য আদান-প্রদান করে। সঠিকভাবে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া স্থানীয় ভ্যাট রাজস্বের প্রায় ৩০ শতাংশ আসে সিগারেট উত্পাদন থেকে। খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে আগামী বছরগুলোয় কর নীতি আরো বেশি যৌক্তিকীকরণ করার চেষ্টা থাকবে। এছাড়া এনবিআরের নানাবিধ পদক্ষেপের কারণে প্রত্যেক বছর ভ্যাটের রেজিস্ট্রেশনও বাড়ছে। সংস্থাটির মতে, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন বাড়ার কারণে যৌক্তিকভাবেই রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে।

তবে সংস্থাটি মনে করছে, সিগারেট থেকে রাজস্ব আয় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে না। কারণ বিভিন্ন সেগমেন্টের সিগারেটের মধ্যে জটিল আন্তঃসম্পর্কের কারণে এর দাম চাইলেই বাড়ানো যাবে না। এছাড়া শীর্ষ ১০ রাজস্ব আয়ের জায়গা থেকে একই হারে আয় বাড়বে না। নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এনবিআর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ট্যাক্স অব্যাহতি দিয়ে রেখেছে। তাই সেসব জায়গায় ওই সময় পর্যন্ত ট্যাক্স হার অপরিবর্তিত রাখতে হবে।

এছাড়া ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেয়ার মধ্যে বড় একটি অংশই রিটেইল সার্ভিস সেক্টর ক্যাটাগরির। প্রচলিত মাধ্যম ব্যবহার করে খাত থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাট আয় বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে এনবিআর। তাই খাতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এনবিআর ইএফডি এসডিসি ডিভাইস বসাতে চায়। একই সঙ্গে মনিটরিংও নিশ্চিত করতে চায় এনবিআর। প্রথম ধাপে এনবিআর ৬০ হাজার ডিভাইস বসাবে ভেন্ডরের মাধ্যমে। এছাড়া পরবর্তী পাঁচ বছরে তিন লাখ ইএফডি মেশিন বসাবে সংস্থাটি। পরিকল্পনা সফল হলে রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করে এনবিআর।

এছাড়া অনেক ভারী শিল্প প্রযুক্তিপণ্য প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে এনবিআর। এর মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা এবং রফতানিমুখী পণ্যের উত্পাদন বাড়াতে সহায়তা করা হচ্ছে। তবে সংস্থাটির মতে, অনেকের ক্ষেত্রে সুবিধা ২০২৫ ২০২৬ সালের দিকে গিয়ে শেষ হবে। তবে এনবিআর কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, জনকল্যাণমূলক কয়েকটি সেক্টর ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা প্রত্যাহার করতে চায়। এরই মধ্যে অনেক সেক্টর থেকে রাজস্ব সুবিধা তুলে নিয়েছে। এর মাধ্যমেও রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া ভ্যাট হারের মধ্যে পার্থক্যও কমিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে ভ্যাট আয় বাড়াতে প্রশাসনিক সংস্কারও প্রয়োজন বলে মনে করে এনবিআর। এজন্য বর্তমান ১২টি কমিশনারেটের সঙ্গে আরো পাঁচটি নতুন কমিশনারেট গঠন করার ইচ্ছা রয়েছে। যার মাধ্যমে মনিটরিং বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান . মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, অনেক সময় বাস্তবতার সঙ্গে এর মিল পাওয়া যায় না। তবে যে এনবিআরের পক্ষে ওই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করার সক্ষমতা আছে। এনবিআর পরিবর্তনের কথা বলার সঙ্গে প্রয়োগ কেন করতে পারছে না সেটা দেখা উচিত। এছাড়া ইএফডি মেশিন বসানোর জন্য কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। এজন্যই কোনো পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি বাস্তবায়নের ওপরও জোর দিতে হবে এনবিআরকে। ভ্যাট আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে, তাহলে রাজস্ব আয় বাড়বে বলে আমি মনে করি।

আরও