নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে গ্যাসভিত্তিক বড় তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে বেসরকারি খাতের তিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এসব কেন্দ্রের সক্ষমতা প্রায় ১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে এখনই স্থায়ীভাবে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্র চালুর জন্য আপাতত গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে অস্থায়ীভাবে (টেম্পোরারি)। ডেডিকেটেড পাইপলাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে পুরোপুরি গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।
মেঘনাঘাটে ৭১৮ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স পাওয়ার। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের নির্মিত কেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা ৫৮৩ মেগাওয়াট। একই এলাকায় আরো একটি ৫৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ইউনিক গ্রুপ। এর মধ্যে রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সিম্পল সাইকেল এবং বাকি দুটি কম্বাইন্ড (জ্বালানি তেল ও গ্যাসচালিত) সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট।
তিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামিট ও ইউনিক গ্রুপের বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি চালুর জন্য ব্যাকফিড সংযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অস্থায়ী গ্যাস সংযোগের অনুমতি পেলেও এখনো পাইপলাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এছাড়া ব্যাকফিড পাওয়ারের জন্য কেন্দ্রটি অপেক্ষায় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অস্থায়ীভাবে জ্বালানি সরবরাহের জন্য গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) সঞ্চালন লাইন থেকে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এ কেন্দ্রে গ্যাস সংযোগের জন্য ৭০০ মিটার পাইপলাইন নির্মাণ দ্রুতই শুরু করবে রিলায়েন্স। সব মিলিয়ে উৎপাদনে যেতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি লেগে যেতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিলায়েন্স পাওয়ারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পুরোপুরি শেষ। এখন কেন্দ্রটির ব্যাকফিড পাওয়ারের অপেক্ষায় রয়েছি। সংযোগ পাওয়া গেলে কমিশনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হবে।’
দেশে বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ১১ হাজার ৫৯২ মেগাওয়াট। নতুন ১ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট উৎপাদনে এলে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়াবে সক্ষমতা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে যদিও জানা গেছে, দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র চালানো যায়। বাকিগুলো পুরনো কিংবা গ্যাসের অভাবে বসিয়ে রাখতে হয়।
মেঘনাঘাটে নির্মিত সামিট, ইউনিক ও রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিনটি এ বছরের মার্চে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। বিপিডিবি বলছে, কভিডের কারণে কেন্দ্রগুলোর কাজে ও প্রয়োজনীয় মালামাল আনায় ধীরগতি, বিদেশী কর্মীদের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর কারণে তা পিছিয়ে যায়। সামিট ও ইউনিক গ্রুপের বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি এরই মধ্যে কমিশনিংয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী অক্টোবরে উৎপাদনে আসার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রিলায়েন্সের কেন্দ্রটি উৎপাদনে যেতে পারে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে।
বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, গ্যাসভিত্তিক বৃহৎ তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এলে দৈনিক গ্যাসের বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৩০ মিলিয়ন এবং সামিট ও ইউনিকের কেন্দ্রে লাগবে ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট করে। তবে জাতীয় গ্রিডে বাড়তি এ গ্যাসের সংস্থান এখন নেই। তাই অন্য কেন্দ্র বসিয়ে রেখে কিংবা গ্যাসে রেশনিং করে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে হবে।
মেঘনাঘাটে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি বিভাগের গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা ছিল। তাদের হয়ে তিতাসের সঙ্গেও গ্যাস সরবরাহ চুক্তি হয়। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য ৪২ ইঞ্চি ডেডিকেটেড পাইপলাইন নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়। যদিও সে কাজ এখনো শুরু হয়নি। তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত হলেও স্থায়ীভাবে গ্যাস দিতে পারছে না সংস্থাটি। এ বিষয়ে জানতে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিষয়ে বিপিডিবির (সদস্য) এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মেঘনাঘাটে গ্যাসভিত্তিক যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রস্তুত হয়েছে সেগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। এফিশিয়েন্সি (কর্মদক্ষতা) অনেক বেশি। এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা গেলে সাশ্রয়ীমূল্যে বিদ্যুৎ পাবে বিপিডিবি। খরচও অনেক কম হবে।’