রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিষ্ঠার সময় ব্যবহৃত ঐতিহাসিক স্থাপনা ‘বড়কুঠি’ বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বড়কুঠি পুনরুদ্ধারে সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে বড়কুঠি দখলের পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি রাবিকে সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে বড়কুঠি সংস্কারের প্রস্তাব দেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে প্রস্তাব নাকচ করে। পরে তার প্রভাব খাটিয়ে বড়কুঠিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
২০১৮ সালের মে মাসে বড়কুঠিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এরপর ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সংস্কারকাজ শুরু করে এবং জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়।
রাবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল আলী বলেন, বড়কুঠি আমাদের জন্মস্থান। কিন্তু এটি এখন আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এটি রাবির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তা ফিরে পাওয়া আমাদের ন্যায্য অধিকার।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আল-মামুন বলেন, বড়কুঠি রাবির ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দখল করেছে। আমরা চাই, রাবিকে এটি ফিরিয়ে দেয়া হোক। নাহলে আমরা আন্দোলনে নামব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য ড. আমজাদ হোসেন বলেন, বড়কুঠি রাবির ইতিহাসের অংশ। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় আঘাত। এখন এটি ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে।
মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মশিহুর রহমান অভিযোগ করেন, সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহান ব্যক্তিগত স্বার্থে বড়কুঠি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেন।
ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন ড. মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, বড়কুঠি নিয়ে এ ষড়যন্ত্র আমাদের ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এটি রাবির কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই।
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, বড়কুঠি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি আমাদের অধীনে থাকা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
বড়কুঠি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, বড়কুঠি রাবির জন্মস্থান এবং এটি আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, অষ্টাদশ শতকে ডাচদের তৈরি ব্যবসাকেন্দ্র বড়কুঠি ১৯৫৩ সালে রাবি প্রতিষ্ঠার সময় পাকিস্তান সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করে। এটি শুরুতে উপাচার্যের বাসভবন ও কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে এটি টিচার্স ক্লাব ও কর্মচারী ইউনিয়নের অফিসে রূপান্তরিত হয়।