সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থীর মনোনয়ন বাড়লেও পুরুষের তুলনায় তা মাত্র ৫ শতাংশ। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, যেখানে নারীদের (৯৬) অংশগ্রহণের হার ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন থাকলেও সেগুলো জনরায়ে সমর্থিত নয়। মূলত পশ্চাৎপদ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, দক্ষতার অভাব, আর্থসামাজিক চাপ প্রভৃতি নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। তাই সংরক্ষিত আসনগুলোয় নারীদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা কার্যকর করা, দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান এবং সম্পত্তিতে অধিকার ও আর্থিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ: বিদ্যমান আইনি কাঠামো ও বাস্তবতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব বলেন।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সভাপতিত্বে সভায় সম্মানীয় অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহসাধারণ সম্পাদক (বাসদ) রাজেকুজ্জামান রতন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার।
এ সময় দেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামো ও ১২ জেলা থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষক ও বিশিষ্ট জেন্ডার কনসালট্যান্ট সানাইয়া ফাহিম আনসারি। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়ক ও উপপরিচালক কানিজ ফাতেমা।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনকালে সানাইয়া ফাহিম আনসারি বলেন, ‘বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্যমূলক আইন ও আইনের দুর্বল প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারিক বাধা, বিয়ের পর সময় দিতে না পারা, বাল্যবিবাহ, সম্পত্তিতে সমানাধিকার না থাকা, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, সহিংসতা ও যৌন হয়রানি, মাতৃত্বজনিত কারণে কর্মবিরতি প্রভৃতিও বাধা হিসেবে কাজ করে। সরকারের বিভিন্ন স্তরে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও সংরক্ষিত আসনের নারীদের প্রতি কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। গবেষণাকালে উত্তরদাতারা সুপারিশ করেন, সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা ও নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।’
অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার বলেন, ‘সংরক্ষণ শব্দটিকে আমরা কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সংরক্ষিত আসনে দলগুলো যখন নারীকে মনোনীত করে সেটা কি সবসময় নেতৃত্ব তৈরি বা বৃদ্ধির জন্য করে থাকে?