পিজি হাসপাতালে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ভেতরে হাসপাতালের ১০টি গাড়ি, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রায় ১৫টি মোটরসাইকেল এবং দুইটি অ্যাম্বুলেন্সসহ ৭টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তবে হাসপাতালটির চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগানোর কাজটা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা করেছেন। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১টা ২০মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় ১ থেকে দেড় ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজ করে। সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও তাদের আগুন নেভাতে সাহায্য করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ভেতরে হাসপাতালের ১০টি গাড়ি, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রায় ১৫টি মোটরসাইকেল এবং দুইটি অ্যাম্বুলেন্সসহ ৭টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তবে হাসপাতালটির চিকিৎসক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগানোর কাজটা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা করেছেন। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১টা ২০মিনিটের দিকে ঘটনা ঘটে। প্রায় থেকে দেড় ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজ করে। সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও তাদের আগুন নেভাতে সাহায্য করেন।

দুপুর ১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসাপাতালের ১০টি বাসের আগুন নেভানোর কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট। কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী অভিভাবকরা তাদের সাহায্য করছেন। বেলা পৌনে ২টার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ঢাকা কমিউনিটি কলেজের আন্দোলনের সমন্বয়ক মিয়াজ সিরাজী বলেন, আমরা আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসক হাসিনার পদত্যাগের দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ আসি। সময় এখানে আগে থেকে অস্ত্রসহ অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের ধাওয়া দেয়। পরে আমরাও উল্টো ধাওয়া দিলে তারা পিজি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে গেইট বন্ধ করে দেয়। পরে তারা ভেতরে থাকা অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে আগুন লাগতে দেখা যায়। অবশ্য এর আগে হাসপাতালের বাইরে ভেতরে দুই পক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

জাতীয় জাদুঘরের সামনে একজন পথচারী বণিক বার্তাকে বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধাওয়া খেয়ে হাসপাতালের মধ্যে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তারা ঢিল ছুঁড়লে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে গেটে আঘাত করতে থাকে। ওদিকে পিজির ছাদ থেকেও ঢিল ছুঁড়তে দেখা যায়।

হাসপাতালের দুইজন স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমরা হাসপাতালের ভেতরে জয় বাংলা স্লোগান শুনতে পাই। ছাত্রলীগের ছেলেদের রামদা লাঠিসোঁটা নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে দৌঁড়াতে দেখি। দুই পক্ষের ইটপাটকেল ছোঁড়ার সময় পুরো হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল চারদিক থেকে বাইক এনে এক জায়গায় জড়ো করে আগুন দেয়। হাসপাতালের প্রায় ১০টি বাসেও আগুন দেয়া হয়। এছাড়া দুই পক্ষের ইটপাটকেলে নং গেইটের কাছাকাছি থাকা প্রায় ১০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের সাথে আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন মারুফ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আসে থেকে দেড় ঘণ্টা পর। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সারাদেশে যেই তাণ্ডব চালাচ্ছে সেটার অংশ হিসেবে‌ই এই আগুন। আমিও আন্দোলনের একজন সমর্থক। আমি নিজে ফায়ার সার্ভিসের সাথে আগুন নেভানোর কাজ করেছি।

আগুন নেভানোর কাজে শিক্ষার্থীদের সাথে উপস্থিত ছিলেন একজন অভিভাবক। তিনি বলেন, আমরা এখন আর আওয়ামী লীগকে চাই না। এমনকি আমরা বিএনপি, জামায়াতকেও চাই না। যারা আজ দেশের জন্য মাঠে নেমেছে, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে মাঠে নেমেছে, তাদেরকেই আমরা দেশ জাতির নেতা হিসেবে দেখতে চাই। আগুন লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ২০ থেকে ২৫ জনের ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী আগুন দিয়েছে। এবং তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাবে এখন। আমরা তা হতে দিব না।

শান্তি গোপাল নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, আমি বারডেম হাসপাতালের সামনে চা খাচ্ছিলাম। তখন দেখলাম শিক্ষার্থীরা চারদিক থেকে এসে শাহবাগ জড়ো হচ্ছিল। এমন সময় হাসপাতালের ভেতর থেকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি, যারা এক সময় হয়তো ছাত্রলীগ করত, তারা শিক্ষার্থীদের ইট পাটকেল ছুঁড়ে মারে। কিছুক্ষণ পর দেখি শাহবাগ মোড় সংলগ্ন গেটের ভেতর থেকেও একদল যুবক শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোঁড়ে। পরে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা গেট খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এর মধ্যে হঠাৎ একদল যুবক গাড়িতে আগুন দেয়। তবে তাদের দেখে আন্দোলনকারী মনে হয়নি। তাদের কারো মাথায় আন্দোলনকারীদের মতো পতাকা কাপড় ছিল না। অনেকটাই উচ্ছৃঙ্খল ছেলেপেলে বলে মনে হয়েছে।

ঘটনাস্থলে থাকা অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোরের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক সাফাত বলেন, কিছু টোকাই শ্রেণীর ছেলেপেলে আগুন লাগানোর কাজটা করেছে। তাদেরকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মনে হয়নি। তবে ছাত্রলীগ কিনা তা নিশ্চিত নই।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা আগুন লাগার সংবাদ শোনার পর দ্রুতই একটি ইউনিট নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। এবং এসে দেখি আগুন জ্বলছে। তবে ঠিক কয়টার সময় তারা আসেন সেই প্রশ্নের জবাব দেননি এই কর্মকর্তা।

আরও