ডিআরইউতে দুদিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী

‘রানা প্লাজা শুধুই ভবন ধস নয়, এটি ব্যর্থ রাষ্ট্রীয় শিল্প কাঠামোর প্রতীক’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইবিসির সহসভাপতি সালাউদ্দীন স্বপন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মর্মান্তিক ঘটনায় ১ হাজার ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। যাদের অধিকাংশকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। আনুমানিক দুইশ শ্রমিক আজো নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু এ ঘটনার এখনো বিচার হয়নি।

রানা প্লাজা ট্রাজেডিকে শুধুই একটি ভবন ধসের ঘটনা হিসেবে দেখলেই চলবে না। এ ঘটনা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রীয় শিল্প কাঠামোর প্রতীক। এটি কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা নয় বরং অবহেলা, লোভ, নিষ্ঠুর ও চরম দায়িত্বহীনতার এক নির্মম পরিণতি।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকালে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) নেতারা। রানা প্লাজা ট্রাজেডির এক যুগ অতিবাহিতের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পরে সেখানে দুদিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইবিসির সহসভাপতি সালাউদ্দীন স্বপন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মর্মান্তিক ঘটনায় ১ হাজার ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। যাদের অধিকাংশকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। আনুমানিক দুইশ শ্রমিক আজো নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু এ ঘটনার এখনো বিচার হয়নি। সোহেল রানা ব্যতীত অন্য আসামিরা জামিনে বাইরে থেকে বুক ফুঁলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনার পর মামলা-রিটসহ ২০টির মতো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয় কিন্তু কোনো ফল আসেনি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে আরেকটি এমন ঘটনা ঘটলে কে দায় নেবে সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও বহু আহত শ্রমিক শারীরিক যন্ত্রণায়, মানসিক বিপর্যয় ও অর্থনৈতিক সংকটে দিনাতিপাত করছেন। কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হলেও সেটি অস্থায়ী ও অসম্পূর্ণ। অধিকাংশ শ্রমিক এখনো পুনর্বাসনের বাইরে রয়েছেন। ডিজিটাল স্বাস্থ্য কার্ড, নিয়মিত ভাতা, মানসিক সহায়তা ও বিকল্প পেশাগত প্রশিক্ষণের প্রতিশ্রুতির একটিও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো তাদের চিকিৎসা, সম্মানজনক জীবিকা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কলকারখানার নিরাপত্তা অডিটের জন্য ২০১৩ সালে ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ গঠিত হয়। এটি স্বাধীন পরিদর্শন ও স্বচ্ছ প্রতিবেদন দিত। শ্রমিকরাও সেখানে নিরাপদে অভিযোগ জানাতে পারত। কিন্তু এর মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালে চালু করা হয় রেডিমেড গার্মেন্টস সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি)। এটি মালিক নিয়ন্ত্রিত ও সরকার নির্ভর। সেখানে শ্রমিক প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষিত থাকে। এটি দায় এড়ানোর মোড়কে পরিণত হয়েছে।

সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, বহু কারখানায় এখনো জরুরি বের হওয়ার নিরাপদ সিঁড়ি নেই। ফায়ার অ্যালার্ম অকেজো ও বিদ্যুৎ সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক কারখানায় ধোঁয়া বের হওয়ার ব্যবস্থা নেই, নিয়মিত ফায়ার ড্রিল হয় না। নিরাপত্তা নিয়ে মুখ খুললে শ্রমিকদের হয়রানি, ছাঁটাই বা কালো তালিকাভুক্তির শিকার হন। নিরাপত্তা নিয়মে নয়, মালিকের স্বদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।

এ সময় শ্রমিকনেতারা সাতটি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- আরএসসি পরিচালনা বোর্ডে সমানসংখ্যক শ্রমিক প্রতিনিধি ও ট্রেড ইউনিয়নের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা, রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের পূর্ণ পুনর্বাসন, নিয়মিত চিকিৎসা ও মাসিক ভাতা অবিলম্বে চালু করা, অ্যাকর্ড-এর মতো একটি নতুন, স্বচ্ছ, শ্রমিকের অংশগ্রহণমূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি (অ্যাকর্ড-২) চালু করা, সব কারখানায় বাধ্যতামূলকভাবে স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে ফায়ার, বিল্ডিং ও ইলেকট্রিক সেফটি অডিট করতে হবে। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, আইনের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিরাপদ ও অধিকার কথা বলার অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে, শ্রমিকদের জন্য সেফটি ট্রেনিং, অভিযোগ জানানো ও রেসকিউ ড্রিলের ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতে শ্রম আইন ও শ্রম বিধির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা।

অনুষ্ঠানে আইবিসির সভাপতি তৌহিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, যুগ্ম সম্পাদক সাহাদত হোসেন, অর্থ সম্পাদক কামরুল হাসান, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল হক আমিন, নুরুল ইসলামসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আলোকচিত্র প্রদর্শনী আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে।

আরও