কর্মক্ষেত্রে বিগত ১ বছরে (১ জানুয়ারি- ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪) সারাদেশে ৬৩৯টি দুর্ঘটনায় ৭৫৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে একই সময়ে সারাদেশে ৭৭২টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৮৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। গত বছর থেকে এ বছর কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়ার পথে যে সকল শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তাদেরকেও এই জরিপে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত (১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয়) খবরের ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস)পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে এসআরএস সম্মেলন কক্ষে নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের জরিপ প্রতিবেদন ২০২৪ উপস্থাপন করেন।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতে। যাদের সংখ্যা মোট ৩৭৯ জন। এর পরেই রয়েছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ১২৯ জন, নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছে ৯২ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এই সংখ্যা ৭০ জন এবং কৃষি খাতে ৮৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন; বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮১ জন; আগুন এবং বিভিন্ন বিস্ফোরণে ৩০ জন; মাচা বা উপর থেকে পড়ে মারা গেছেন ৫০ জন; বজ্রপাতে ৬৯ জন; শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ২১ জন; পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে ৭ জন; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১১ জন; পানিতে ডুবে ১৭ জন এবং অন্যান্য কারণে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জরিপের পর্যবেক্ষণে, রাস্তার কাঠামো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা, বেপরোয়া যান চলাচল ইত্যাদিকে পরিবহন সেক্টরে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। উৎপাদনশীল খাতে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি না নেয়া, সেফটি বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ না দেয়া, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে অদক্ষতা এবং নির্মাণ খাতে কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয়া, নিরাপত্তাবেষ্টনী ব্যবহার না করে মাচার উপর কাজ করা এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতার অভাবকে চিহ্নিত করেছে এসআরএস।
জরিপ তথ্য প্রকাশকালে এসআরএস-এর নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, কর্মক্ষেত্রে এই দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি কারণ, এখানে শুধুমাত্র যে সকল নিহতের সংবাদ পত্রিকায় এসেছে তার সংখ্যা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে অনেক নিহতের সংবাদ পত্রিকায় আসে না। এবছর জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানে অনেক শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাদের এই জরিপে আনা হয়নি।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে এবছর মৃত্যুর পরিমাণ কমলেও সড়ক দুর্ঘটনা এবং বজ্রপাতে মৃত্যুর পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। বজ্রপাতে যে সকল কৃষি শ্রমিক মারা যায় তারা কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ পায় না। তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।