টিআইবির পর্যবেক্ষণ

রাজনৈতিক পরিচয় যাচাইয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া বা না দেয়ার চর্চা এখনো চলছে

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৩৩টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে; এর মধ্যে ২৭টিতে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া চারটি ব্যাংকনোট থেকে শেখ মুজিবের ছবি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হচ্ছে তা এখনো বিতর্কিত।

রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া বা না দেয়ার চর্চা এখনো অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিনের ওপর ‘নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক পর্যবেক্ষণে এ কথা বলছে টিআইবি। সোমবার (১৮ নভেম্বর) ওই পর্যবেক্ষণ টিআইবির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়, রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার ও নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেসব রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন প্রদান করেছে সেগুলো হচ্ছে গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন ও এবি পার্টি। আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের (আওয়ামী লীগের) পুনর্বাসন না করা, মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে তাদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু, ফ্যাসিবাদী দল ও জোটকে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের সুযোগ থাকবে না মর্মে ঘোষণা করা হয়েছে। গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৭ মার্চসহ আটটি জাতীয় দিবস উদযাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৩৩টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে; এর মধ্যে ২৭টিতে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া চারটি ব্যাংকনোট থেকে শেখ মুজিবের ছবি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হচ্ছে তা এখনো বিতর্কিত। বিভিন্ন গোষ্ঠী আটটি জাতীয় দিবস পালন না করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। নিষিদ্ধ ঘোষণা সত্ত্বেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে লক্ষ করা যায়। এছাড়া অন্যান্য পেশা ও প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি বিষয়ে কোনো অবস্থান লক্ষ করা যায়নি।

কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে টিআইবি তাদের পর্যবেক্ষণে বলছে, এসব প্রতিষ্ঠান ও পদের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিচার বিভাগ, আইন কমিশন, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় (উপাচার্য) ও কলেজ (অধ্যক্ষ), ব্যবসায় সমিতি, রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক (গভর্নর, উপদেষ্টা, বিএফআইইউ এর প্রধান), এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশন, ক্রীড়া সংস্থা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দলীয়মুক্ত করার অংশ হিসেবে পদোন্নতি, পদায়ন, বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিতে নিয়োগ বাতিল ঘোষণা, এবং চুক্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশাসনিক রদবদল করা হয়েছে।

টিআইবি আরো জানায়, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২, এবং বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ চার বার অবতীর্ণ হতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একদিকে পিএসসি থেকে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েও বিগত সরকারের সময়ে চাকরি না পাওয়া ২৫৯ চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও ৯৯ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত মোট ৩৬৯ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিতর্কিতভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া ছয়টি বিসিএস ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলমান।

পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়েছে, দেখা যাচ্ছে কোথাও কোথাও পদত্যাগের জন্য বাধ্য করা হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপে গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করা হয়েছে। নিয়োগে বিপরীতধর্মী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতার ঘাটতি লক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া বা না দেয়ার চর্চা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

আরও