দেশে প্রায় ৩০ প্রজাতির কাছিম বা কচ্ছপ রয়েছে। তার মধ্যে বাটাগুর বাসকা অতি বিপন্ন প্রজাতির কাছিম। এককালে সুন্দরবন এলাকায় প্রচুর দেখা যেত কাছিমটি। যদিও দুই দশক আগে এ প্রজাতির কাছিমটিকে বিপন্ন বলেই ধরা নেয়া হয়েছিল। কাছিমটি টিকিয়ে রাখতে বন বিভাগসহ কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে এক যুগের বেশি সময় ধরে। অবশেষে সফলতা পেয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে তিনটি কচ্ছপের ডিম ফুটে জন্ম নিয়েছে ৬৫টি বাচ্চা। গতকাল সকালে বাচ্চাগুলোকে তুলে কেন্দ্রের কচ্ছপ লালন-পালন কেন্দ্রের সংরক্ষণ প্যানে রাখা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ‘২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনটি কচ্ছপ ৮২টি ডিম দেয়। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে বালির মধ্যে রাখা হয়। নিবিড় পরিচর্যার পর গতকাল সকালে কেন্দ্রের পুকুরপাড়ের স্যান্ডবিচে রাখা বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের ডিম থেকে ফুটে বের হতে শুরু করে ৬৫ বাচ্চা। এসব বাচ্চা প্যানে রেখে লালন-পালনের পর ছাড়া হবে বড় পুকুরে। এ পর্যন্ত করমজলে ৫২১ ডিম থেকে ৪৭৫টি বাচ্চা ফুটেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এক সময় এ অঞ্চলে প্রায় ২৬ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যেত। এর মধ্যে বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ আর দেখা যাচ্ছিল না। এ কারণে ২০০০ সাল থেকে গবেষকরা ধারণা করেন, পৃথিবীতে আর বাটাগুর বাসকার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ২০০৮ সালে গবেষকরা প্রকৃতিতে বাটাগুর বাসকা আছে কিনা, তা খুঁজতে শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নোয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন জলাশয়ে আটটি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। যার মধ্যে চারটি পুরুষ ও চারটি স্ত্রী।’
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, নতুন করে আবারো প্রকৃতিতে ওই প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়ার পর প্রজননের জন্য গাজীপুরে ভাওয়াল গড় নিয়ে যাওয়া হয়। বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সেগুলোকে নিবিড়ভাবে লালন-পালন ও প্রজননের চেষ্টা করেন। সেখানে ভালো সাড়া না পাওয়ায় ২০১৪ সালে আটটি বাটাগুর বাসকা, তাদের জন্ম দেয়া ৯৪টি বাচ্চাসহ করমজল প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। করমজলে বাটাগুর বাসকার গবেষণায় বাংলাদেশ বন বিভাগের সঙ্গে আরো তিনটি সংস্থা যোগ দেয়। ২০১৭ সাল থেকে কেন্দ্রটিতে ডিম দিতে শুরু করে মহাবিপন্ন প্রজাতির বাটাগুর বাসকা কচ্ছপগুলো। বর্তমানে করমজলে ৩৮৭টি এ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে।’