বিদ্যুৎ বিতরণে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও শুরু হয়েছে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ। ২০২১ সাল থেকে সিলেটেও প্রি-পেইড মিটার সংযোগ শুরু হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১, ২, ৩, ৪ ও ৫-এ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। তবে ভোগান্তি কমানোর কথা বলে চালু করা প্রি-পেইড মিটার এখন সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকের অভিযোগ, কোনো প্রকার নোটিস ছাড়াই প্রি-পেইড মিটার লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্তি বিল আসারও অভিযোগ রয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, অস্বাভাবিক বিল বেশ কয়েকটি কারণে আসতে পারে।
গ্রাহকরা বলছেন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপন নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না। এতে গ্রাহকের ক্ষোভ বাড়ছে। ক্ষোভ থেকে বিভিন্ন স্থানে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, প্রতিবাদ জানাচ্ছে। নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মিটারের বিরুদ্ধে একাধিক সভা-সমাবেশ করেছেন। তবে এখানেই শেষ নয়। অপ্রীতিকর ঘটনার পাশাপাশি অতিরিক্ত বিল নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ৯০ শতাংশ গ্রাহকের অভিযোগ, আগে যে বাড়িতে ৭০০ টাকা বিল আসত, এখন ২ হাজার ৫০০ টাকা রিচার্জ করতে হচ্ছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাঠানপাড়ায় ইখতার খান মার্কেটের কর্ণধার ইখতার খান প্রি-পেইড মিটার নিয়ে একাধিক অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মোজাম্মেল নামে এক ব্যবসায়ী প্রি-পেইড মিটারে ২ হাজার টাকা রিচার্জ করার পর দেখেন ১ হাজার ৬০০ টাকাই কেটে নেয়া হয়েছে। একই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী জেবুল আহমদও ১ হাজার টাকা রিচার্জ করেন। পরে দেখেন ৭০০ টাকা নেই। এভাবে হলে তো মানুষকে দেউলিয়া করে ফেলবে নতুন মিটার।’
দক্ষিণ সুরমার কুশিঘাট এলাকার বাসিন্দা মাহবুব হোসেন মজনু জানান, ১৬ জুলাই তার বাসায় প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত মামলা দিয়ে তাকে ঘরছাড়া করেছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
কুশিঘাট এলাকায় শাহানা টেলিকম নামে একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে মিজানের। হঠাৎ একদিন মিটার নিয়ে হাজির হন বরইকান্দি বিদ্যুৎ উন্নয়নের কর্মকর্তারা। কোনো কিছু না বলে পুরনো মিটার খুলে নতুন মিটার লাগিয়ে দেন। এভাবে না বলে মিটার লাগানোর কারণ জানতে চাইলে উল্টো মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
নগরীর শাহজালাল উপশহরের সি ব্লকের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার আঁখি একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার মানুষের মন জয় করতে পারেনি। উল্টো দুর্গতি ছড়িয়ে দিয়েছে। ৫০০ টাকা রিচার্জ করলেই প্রথমে ১৪০ টাকা ভ্যাট নিয়ে নেয়। বাকি থাকে ৩৬০ টাকা। ওই টাকা দিয়ে ১০-১২ দিন চলে। সে হিসাবে মাসে তিনবার রিচার্জ করতে হয়। বাসায় চলে দুটি লাইট আর একটি ফ্যান। অথচ পুরনো মিটারে সারা মাসে বিল আসত ৭০০-৮০০ টাকা।’
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিতরণ অঞ্চল সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্রাহক হয়রানি কমাতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ওপর মহলের নির্দেশে। মিটার স্থাপনে বিদ্যুৎ বিভাগের কেউ টাকা চেয়েছে—এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতিরিক্ত বিল এলেও সেটি সমাধানের ব্যবস্থা রয়েছে।’