উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এরই মধ্যে জেলায় জারি করা হয়েছে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠাতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি তৎপর রয়েছে রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। করা হচ্ছে মাইকিং। তবে এসব সতর্কতায় কর্ণপাত করছেন না অধিকাংশ মানুষ। অনেকের মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে অনীহা লক্ষ করা যাচ্ছে।
এদিকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সতর্কতার পাশাপাশি ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে ভোলায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও রেড ক্রিসেন্ট একযোগে মাঠে কাজ করছে। ৯২টি মেডিকেল টিম ছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় ১৫ হাজার কর্মী। উপকূলীয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোর বাসিন্দাদের মূল ভূখণ্ডে আনতে কাজ করছেন তারা। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য স্ব-স্ব এলাকার সাইক্লোন সেল্টারসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে তাদের। এছাড়া পর্যাপ্ত মজুদ রাখা হয়েছে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ঔষধপত্রসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী।
আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা দেশের অন্যান্য উপকূলীয় জেলার পাশাপাশি দ্বীপ জেলা ভোলার ওপর ব্যাপক আঘাত হানতে পারে। তবে এ সতর্কতায় কর্ণপাত করছেন না উপকূল এলাকার সাধারণ মানুষ। অনেকের মধ্যেই বাসস্থান ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে অনীহা লক্ষ করা যাচ্ছে।
সদর উপজেলার তুলাতুলি বেরিবাঁধ এলাকার বাসিন্দা নুরুন্নাহার বলেন, ‘কতো ঝড় আইলো গেলো আমরা আমাদের জায়গায়ই পড়ে থাকি। নিজের ঘর দুয়ার হালাইয়া আমরা কই যামু!’
পাশের ইউনিয়ন কাচিয়ার বেরিবাঁধ সংলগ্ন নুর ইসলাম মাঝি বলেন, ‘নিজের ঘর দুয়ার হালাই রাইখ্যা আশ্রযকেন্দ্রে যাইয়াও আমাগো না খাইয়া থাকতে হইবো। হেয়ানো যেই শুকনা খাওন দেয় হেগুলির চেয়ে নিজের ঘরে থাইকা শান্তি মতো চাইটা ডাইল ভাত খাইয়া মরলে ভালো।’
তবে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম নাকিব বলেন, ইউনিয়নের মাঝেরচরে প্রায় বিশ হাজার লোকের বসবাস। এরই মধ্যে আমরা তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য ২০টি ট্রলার প্রস্তুত রেখেছি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইনসহ পর্যাপ্ত ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার হাত থেকে রক্ষায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে মনপুরা, ঢালচর, কুকরি মুকরিসহ পুলিশ তদন্তকেন্দ্র রয়েছে, এমন এলাকাগুলোতে পুলিশ সদস্যদের মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। গতক বছরের মতো এবারও তদন্ত কেন্দ্রগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্রয় নিতে আসা সবাইকে রান্না করে খাবার বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, এরই মধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় সাধারণ মানুষকে নিরাপদে থাকার জন্য সতর্কতা মূলক মাইকিং করা হচ্ছে। তাছাড়া মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। প্রতিটি উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে চিড়া, গুড় ও মুড়িসহ বিভিন্ন শুকনা খাবার। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না।