গাজীপুর

পোশাক শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, কারখানায় আগুন

ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে শ্রমিকদের সংঘর্ষ থামলেও তারা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেই অবরোধ চলাকালে সামান্য দূরে গাজীপুর মহানগরীর পানিশাইল এলাকায় ডরিন ফ্যাশন নামের একটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

এক পর্যায়ে দুই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা, হাতাহাতি ও সবশেষে এলাকাবাসীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা জিরানি বাজারের পাশেই অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে কালিয়াকৈর এবং ঢাকা ইপিজেট ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর সারাবো চক্রবর্তী এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছে। আজও বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরীর চক্রবর্তী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ কারণে আশপাশের অন্তত ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১ নভেম্বর থেকে পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। গত রোববার কারখানা খুলে দেয়া হলেও দুপুরের পর ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।

সোমবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা দেখেন, তাঁদের কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই নোটিশ দেখে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানি এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। একই সময়ে একই সড়কের পৃথক স্থানে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হন।আহত শ্রমিকদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় কিছু শ্রমিক পানিশাইল ও কলতাসুতি এলাকায় ঢুকে পড়ে এলাকার লোকজনদের মারধর করেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দেন। বেশ কিছু সময় দুই কারখানার শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকোর কিছু শ্রমিক পূর্ব কলতাসুতি এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন।

খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ও ঢাকা ইপিজেট ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে শ্রমিকদের সংঘর্ষ থামলেও তারা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

আরও