মুন্সিগঞ্জে জনবল সংকটে চালু হয়নি ট্রমা সেন্টার

মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে ২০১০ সালে মুন্সিগঞ্জে ট্রমা সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।

মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে ২০১০ সালে মুন্সিগঞ্জে ট্রমা সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৯ সালে শ্রীনগরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে চিকিৎসা কেন্দ্রটি নির্মাণ শেষ হয়। তবে নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে সেটি এখনো চালু হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। জনবল নিয়োগ করা হয়নি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামও দেয়া হয়নি। এ কারণে শিগগিরই ট্রমা সেন্টারটি চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না।

জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর গুরুত্ব বিবেচনায় ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১০ সালে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও দুই দফায় দরপত্র দিয়ে সময় লেগেছে নয় বছর। ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রটি ২০১৯ সালে নির্মাণ শেষ হলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরজমিনে দেখা গেছে, ভবনের বেশির ভাগ জানালার কাচ ভাঙা, মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে অবকাঠামো। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেয়ালের অনেক স্থানেই উঠে গেছে আস্তরণ। মেঝেতে জমেছে শেওলা। মরিচা ধরেছে লোহার কাঠামোগুলোয়। ভবনের দেয়ালের রঙ নষ্ট হয়ে শেওলা জমতে শুরু করেছে। মূল ফটকটি তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকলেও কৌশলে বিভিন্ন দিক দিয়ে। ভেতরে প্রবেশ করছে মানুষ। এছাড়া আশপাশে দেখা যায়নি কোনো নিরাপত্তা কর্মীকে। চারদিকে ঝোপঝাড় আর গাছপালার কারণে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে ভবনের চারদিক। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ভবনটিকে স্থানীয়রা এখন ভূতের বাড়ি নামে ডাকে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বহিরাগতরা ট্রমা সেন্টারের নিচু দেয়াল টপকে মাদক সেবন করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশের তথ্যানুযায়ী, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যানবাহনের চাপ তিন গুণের বেশি বেড়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে। ফলে মহাসড়কে বেড়েছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। প্রতি বছর গড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এ মহাসড়কে। এতে প্রাণহানিও হচ্ছে। দীর্ঘদিনেও ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় এসব ঘটনায় আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে অনেকটাই নিরুপায় হয়ে ছুটতে হয় রাজধানীতে। এতে মাঝপথেই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় অনেকের। বিগত দেড় বছরে মহাসড়কে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে অর্ধশতাধিকেরও বেশি মানুষের। আর এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পঁাচ শতাধিক। যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা দুর্ঘটনার সময় ছিল গুরুতর। দীর্ঘ সময় চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছে অসংখ্য মানুষ।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে নিয়মিত নিয়োজিত থাকবেন সাতজন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), তিনজন অর্থোপেডিক সার্জন, দুজন অ্যানেস্থেটিস্ট, দুজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ ১৪ জন চিকিৎসক। এছাড়া ১০ জন নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪ জন অন্যান্য পদে নিয়োজিত থাকবেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি এখনো। পৌঁছায়নি কোনো ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম। ফলে জনবল ও সেবা সরঞ্জাম সংকটে দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টারটি।

এ প্রসঙ্গে মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুরুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুধু অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। কোনো ধরনের জনবল নিয়োগ করা হয়নি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামও দেয়নি। এতে দ্রুত হাসপাতালটি চালু করাও সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন জনবল, যন্ত্রপাতি, আসবাবসহ অনেক কিছু। সেন্টারটি চালুর জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বারবার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হচ্ছে। তবু কোনো নির্দেশনা আসেনি। যেহেতু পদ্মা সেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সেই গুরুত্ব বিবেচনায় এখন সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষা করা হচ্ছে।’

আরও