প্রতি বছর বগুড়ায় প্রচুর পরিমাণে আলু উৎপাদন হয়। তবে সংরক্ষণের অভাব ও আর্থিক সংকটে অনেক চাষী কম দামে আলু বিক্রি করে দেন। তখন কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে মুজদ করেন মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা। এতে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার স্বাভাবিক রাখতে বগুড়ায় প্রথমবারের মতো নির্মাণ করা হয়েছে অহিমায়িত মডেল ঘর। সংরক্ষণের সংকট নিরসন ও চাষীদের লোকসান কমাতে নির্মাণ করা ৬৭টি মডেল ঘরে প্রায় আড়াই হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা যাবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় এবং উচ্চফলনশীল মিলে ৪৮ জাতের আলুর আবাদ হয় বগুড়ায়। এর মধ্যে বেশি আবাদ হয় এস্টারিক্স (স্থানীয়ভাবে স্টিক নামে পরিচিত) নামে উচ্চফলনশীল জাতের আলু। চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৫ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯১০ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে ৬০ হাজার ৪৩৫ টন, যা গত বছরের তুলনায় ৫ হাজার ১৭৫ হেক্টর বেশি। সেক্ষেত্রে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তবে ভালো দাম পাচ্ছেন না কৃষক।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আলুর বহুমুখী ব্যবহার সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকারি খরচে নির্মাণ হয়েছে অহিমায়িত মডেল ঘর। প্রাকৃতিক উপায়ে বাঁশ, চাটাই, কাঠ দিয়ে তৈরি মাচায় বিনা খরচে আলু সংরক্ষণ করা যাবে। বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, শাজাহানপুরে মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২০টি ঘর রয়েছে সদর উপজেলায়। এরপর ১৮টি ঘর রয়েছে শিবগঞ্জে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় আড়াই লাখ টাকা। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩৫ টন করে আলু সংরক্ষণ করা যাবে তিন-চার মাস। আবহাওয়া ভালো থাকলে সর্বোচ্চ ছয় মাস আলু সংরক্ষণ রাখা যাবে।
এ প্রসঙ্গে বগুড়ার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তা মমতা হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হিমাগার ভাড়া, লোড আনলোড ও পরিবহন খরচসহ বস্তা প্রতি প্রায় ৫০০ টাকা ব্যয় কমবে চাষীদের। তবে অহিমায়িত ঘরে কাটা, অপরিপক্ব, রোগযুক্ত ও ছাল ওঠা আলু রাখা যাবে না। সংরক্ষণাগারে সূর্যের আলো ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে আলু সংরক্ষণ করে চাষীরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটি চলমান থাকলে সুবিধা পাবেন প্রান্তিক চাষীরা।’
মডেল ঘরে আলু সংরক্ষণ করার পর একজন চাষী ভালো দাম পাবেন। বাজারও সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত হবে। এতে কিছুটা হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসবে। এ মডেল দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক শাহানা আখতার জাহান।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। বাঁশ, কাঠ, ঢেউটিন, সিমেন্টের পিলার, ককসিট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের মডেল ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে কৃষকদের জমিতেই। কৃষদের সঙ্গে একটি সমঝোতাও রয়েছে।’