দুর্যোগপূর্ণ
আবহাওয়া থেকে ফসল রক্ষায় মুন্সিগঞ্জের ৬৮টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয় কৃষি আবহাওয়া
পূর্বাভাস তথ্য কেন্দ্র। ঝড়-বৃষ্টি, আর্দ্রতা
আর খরার আগাম খবর কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রকল্পটি
স্থাপন করা হয়। এতে অর্থায়ন করে বিশ্বব্যাংক। প্রতিটি তথ্য বোর্ড ও রেইন গেজ
মিটার বসানো বাবদ ব্যয় হয় পৌনে ২
লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি কৃষকের জন্য হলেও এর সুফল ভোগ
করতে পারেনি তারা। কারণ এ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র
ধারণা নেই তাদের। এ ব্যাপারে কৃষি
কর্মকর্তারাও কিছু জানাননি বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকের।
স্থানীয় কৃষকের অভিযোগ, বিগত কয়েক বছরে একবারের জন্যও এসবের দেখভাল করেনি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে কৃষি খাতের গুরুত্বপূর্ণ এসব যন্ত্র।
মুন্সিগঞ্জের ভট্টাচার্যের বাগ এলাকার কৃষক রফিক সিকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কৃষকের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে সরকারের এমন উদ্যোগ রয়েছে সে কথা কৃষকই হয়তো জানেন না। কারণ এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তারা কখনো কৃষকদের জানাননি। কৃষি বিভাগের খামখেয়ালিতে এমন প্রকল্পের কোনো সুফল পাননি কৃষক।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতির উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য তথ্য বোর্ড ও রেইন েগজ মিটার বসানো হয়। প্রতিটি যন্ত্র বসানো বাবদ ব্যয় হয় পৌনে ২ লাখ টাকা। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ডে রয়েছে রেইন গেজ মিটার। এতে ডিসপ্লে বোর্ডে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতার হার, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়ের পূর্বাভাসসহ ১০টি তথ্যের ছক আছে। এ বোর্ড থেকে তিনদিন আগের ও তিনদিন পরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা সম্ভব কৃষকের। বোর্ড পরিচালনার জন্য ওই সময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দুদিন করে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে আবহাওয়াবিষয়ক সফটওয়্যারসহ প্রত্যেককে একটি করে ডিজিটাল স্মার্ট ট্যাব দেয়া হয়। সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সরকারিভাবে প্রতি মাসে ফ্রি মোবাইল ডাটাও দেয়া হচ্ছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ছাদে, সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল থাকলেও উধাও মূল্যবান সব রেইন গেজ মিটার। এমন চিত্র দেখা গেছে রামপাল, পঞ্চসার, বজ্রযোগিনী, মহাখালী, শিলই, মোল্লাকান্দিসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে।
পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সচিব রুহুল আমিন সবুজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদ সচিব হিসেবে থাকলেও জানতে পারিনি কেন বা কী কারণে স্থাপন করা হয়েছে আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড। আমরা প্রায়ই দেখি বিভিন্ন জায়গা থেকে আবহাওয়ার পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হলে কৃষক খোঁজখবর নিতে আসেন ইউনিয়ন পরিষদে। আমরাও কৃষকের বিভিন্ন সভা-সেমিনারে জানাই ইউনিয়ন পরিষদে এসে খোঁজখবর নিয়ে বীজ বপন করতে। কিন্তু সরকার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে আবহাওয়া পূর্বাভাসের আগাম তথ্য কৃষককে জানাতে যে প্রকল্প নিয়েছে, আমরা মনে করি জেলা কৃষি বিভাগের উদাসীনতাই এমন উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। যার প্রতিফলন হিসেবে এর কোনো সুফলই পাননি প্রান্তিক কৃষক।’
বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য কর্মকর্তা মো. রবিন বলেন, ‘আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য বোর্ডটি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হলেও কয়েক বছরেও এসবের তদারকি করেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় কৃষি বিভাগের দায়িত্বে একজন করে উপসহকারী থাকা সত্ত্বেও এসবের দেখভাল কেউ করেনি। শুরু থেকে টানা কয়েক বছরে তথ্য বোর্ডে কোনো ধরনের পরিবর্তন করা হয়নি। প্রতি বছরই অসময়ের বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক অথচ সরকারের কৃষিবান্ধব উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও সুফলই পেল না কৃষক। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে এটি স্থাপন করা হয়েছে, অথচ আমরাই জানি না এর কী কাজ। আমাদের মতো প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে যারা আছেন, তারা কেউ-ই জানেন না এটা কী কাজে ব্যবহৃত হয়।’
কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডগুলোর এমন বেহাল দশা স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এবিএম ওয়াহিদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উপসহকারীসহ এসব আবহাওয়া তথ্য বোর্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এটি পরিচালনার জন্য উপসহকারীদের ডিজিটাল স্মার্ট ট্যাব দেয়া হলেও সেসব ট্যাবের কোনো হদিস মিলছে না। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কারণ এটি নিয়ে আমরাও বিব্রত, যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটির কার্যক্রম সচল রাখতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’