খুলনায় বেশির ভাগ পণ্য আনা-নেয়া করা হয় নৌপথে। এ অঞ্চলে কেন্দ্রীয় নৌযান মেরামত কারখানা না থাকায় সরকারি-বেসরকারি নৌযানগুলো মেরামত ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর নৌযান মেরামত কারখানা ও একটি আধুনিক নৌযান প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এজন্য খুলনা জেলা প্রশাসন রূপসা নদীর পাড়ে খাস জমিটি বুঝিয়ে দেয় সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরকে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের প্রায় সাড়ে তিন একর জমি ১৫ প্রভাবশালীর দখলে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই জমি দখলে রেখে ব্যবসা করছেন তারা। দখল করা জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ডক ইয়ার্ড, ইজিবাইকের গ্যারেজ, কাঠের গোলা, ইট, বালি, সিমেন্ট, কয়লা, পাথর, করাতকলসহ ছোটবড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জমির পরিধি বাড়াতে প্রতিনিয়ত ভরাট করছেন রূপসা নদী। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে নদীর আকার ছোট হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ১ নম্বর কাস্টম ঘাট থেকে ২ নম্বর স্লুইসগেট পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ২ দশমিক ৩৩ একর জমি রয়েছে। এছাড়া ওই জমির পাশাপাশি প্রায় এক কিলোমিটার নদীর অংশজুড়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জমি রয়েছে ১৮০ ফুট করে। তবে পুরো জমি দখল হয়ে আছে বছরের পর বছর। নৌযান মেরামত কারখানা স্থাপন করতে ৩ দশমিক ৩৩ একর জমি যানবাহন অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে যানবাহন অধিদপ্তর সাত বছর আগে জমি বুঝে পেলেও কাজ শুরু করতে পারেনি।
যানবাহন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (নৌ) মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘২০১৭ সালে জমি বুঝে পেয়েছি। তবে দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি। যখনই প্রকল্পের কাজ নিয়ে মাপজোখ হয়, তখনই আন্দোলনে নামে দখলদাররা। মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি দেয়ার মতো কর্মসূচি দিয়ে কাজটি বাধাগ্রস্ত করে তারা। সম্প্রতি এ বিষয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে খুলনা শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় ভৈরব নদ ও রূপসা নদীর তীরে হাঁটাচলার জন্য ‘ওয়াকওয়ে’ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে খুলনা সিটি করপোরেশন। প্রকল্পের আওতায় ভৈরব নদের অংশের কাজ শেষ হলেও দখলদারদের বাধার কারণে রূপসা নদীর ১ ও ২ নম্বর কাস্টম ঘাট অংশের কাজ করা যায়নি।
তবে জমি দখলে রাখা ব্যক্তিরা বলছেন, এক যুগেরও বেশি সময় সরকার এ জায়গার বন্দোবস্ত দেয়া বাতিল করেছে। মাঝে মাঝে সরকারি কিছু লোকজন এসে মাপজোখ করে। এখন অবৈধভাবে ব্যবসা করা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই আমাদের।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার খলিফা বলেন, ‘আমরা এখানকার পুরনো ব্যবসায়ী। সরকার জায়গা নেবে শুনেছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। সরকার এখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এলে তখন পরিস্থিতির আলোকে কাজ করব।’