কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় এরই মধ্যে একাধিক পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আর ঘাটতির প্রভাবে বাড়তে শুরু করেছে এসব পণ্যের দাম। সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, পণ্যবাহী যান চলাচল স্বাভাবিক না হলে জিনিসপত্রের ঘাটতি আরো তীব্র হয়ে উঠবে।
এর মধ্যে আবার আমন মৌসুমের প্রস্তুতি চলছে। ফলে সারের সরবরাহ নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পণ্য পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, নিরাপত্তার কারণে তারা গাড়ি সড়কে নামানোর সাহস পাচ্ছেন না। তারা আরো দু-একদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চান।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’-এর পর ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশে সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি কারফিউ জারি করেছে সরকার। কিন্তু এতেও হতাহতের ঘটনা এড়ানো যায়নি গতকাল। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে গাড়ি নামানোর সাহস পাচ্ছেন না পণ্যবাহী যানের মালিকরা।
দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচামালের আড়ত কারওয়ান বাজার। গতকাল এ বাজারে অলস সময় পার করেন ব্যবসায়ীরা। ট্রাক না আসায় তারা চাহিদা
মোতাবেক পণ্য পাচ্ছেন না। মুরগির ব্যাপারী ইয়াসিন জানান, চাহিদার অর্ধেকও মিলছে না। প্রতিদিন গড়ে তিনি ৫০০ মুরগি বিক্রি করেন। তবে গতকাল তিনি পেয়েছেন ১০০টি।
বণিক বার্তাকে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির দাম একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকায় উঠেছে। সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। মুরগির ট্রাক না এলে দাম আরো বেড়ে যাবে।’
পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থার বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে; সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পণ্যের মূল্যেও পড়বে। তবে নিকট ভবিষ্যতে এটার ইতিবাচক সমাপ্তি ঘটবে হবে আশা করছি।’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের প্রতিদিন ১৫-২০ বস্তা বিক্রি করেন। তবে গতকাল তিনি এক বস্তা পেঁয়াজও জোগাড় করতে পারেননি। বণিক বার্তাকে এ ব্যবসায়ী জানান, পাবনায় পেঁয়াজের দাম একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় ঠেকেছে।
সড়কে পণ্যবাহী যান না নামানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি তাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শ্রমিকের নিরাপত্তা নেই, গাড়ির নিরাপত্তা নেই। তাহলে গাড়ি চালাবে কেন? এখন পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আমরা আরো দু-একদিন পরিস্থিতি দেখব। পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’
কারওয়ান বাজারের চালের বাজার গতকাল পর্যন্ত স্থিতিশীল পাওয়া গেছে। এদিন পাইজাম চালের কেজি ছিল ৫৬ টাকা। অন্যান্য চালের দামও অপরিবর্তিত ছিল।
বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজাজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দু-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। আমদানি ও রফতানি পণ্যের কার্গো চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও আছে। তাই সরকার ও ব্যবসায়ীদের বসে একটি উপায় বের করা উচিত।’
এদিকে সারের সরবরাহ ব্যবস্থার বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডলার সংকটে এমনিতে সার আমদানি কম হয়েছে। ফলে সারের সংকট রয়েছে। এর মধ্যে আবার সার পরিবহনে বিঘ্ন ঘটলে দাম বেড়ে যাবে, যা আমন উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে।’