ভাষাশহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদের স্মৃতি রক্ষায় ২০০৮ সালে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্মাণ করে জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। সে সময় বাংলা একাডেমি থেকে বেশকিছু বই দেয়া হয় পাঠাগারে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১৬ হাজার বই রয়েছে। গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা ভালো হলেও কাঙ্ক্ষিত পাঠক মিলছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাঠক বলছেন, তারা পাঠাগারে আসতে চান। কিন্তু পাঠাগারে ভাষা আন্দোলন ও অন্য শহীদদের নিয়ে লেখা বই নেই। এ কারণে পাঠক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে এই সূর্যসন্তানকে মরণোত্তর একুশে পদক দেয়া হয়। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পাড়িল গ্রামে জন্ম নেয়া রফিকের নামে গ্রামটির নামকরণ করা হয় রফিক নগর। ২০০৮ সালের ২৪ মে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ রফিক নগরে নির্মাণ করে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। আশপাশের এলাকার মানুষ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে জাদুঘর ও গ্রন্থাগারে আসে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষাশহীদদের সম্পর্কে পাঠদানের অভাবে শিশুরা ভুলতে বসেছে ভাষাশহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ অন্যদের। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরার দাবি সচেতন নাগরিকদের।
পাঠাগারের লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন জানান, পাঠাগারে প্রায় ১৬ হাজার বই আছে। গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনাও ভালো। পরিচর্যাও আছে। কেবল পাঠকের অভাবেই গ্রন্থাগারটি এখন মলিন হয়ে আছে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম প্রথম পাঠক আসত। ধীরে ধীরে পাঠক কমে যায়। এখন আর আগের মতো পাঠক আসে না।’
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে পাঠাগারমুখী করতে হলে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। নিজেদের উদ্যোগী হয়েই শিক্ষার্থীদের ঘুরে দেখাতে হবে শহীদ রফিক নগর। আধুনিক করতে হবে পাঠাগারটি।’
মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘মাতৃভাষার চেতনা, বাংলা ভাষার চেতনাকে ধারণ করতে হবে সবাইকে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে দেশপ্রেম, মমত্ববোধ বাড়াতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে ভাষাশহীদ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’
শহীদ রফিক নগরকে আরো সমৃদ্ধ ও জনসমাগম বাড়ানোর কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার। তিনি বলেন, ‘আগামী প্রজন্মকে মাতৃভাষা দিবস ও এর তাৎপর্য জানানোর জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নির্মাণ, ভাষাবিষয়ক সাহিত্য চর্চা, শিক্ষার্থীদের গান, কবিতা ও কুইজের মাধ্যমে ভাষার জ্ঞান বাড়ানো হবে। এছাড়া শহীদ রফিক নগরের স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগারে শিক্ষার্থীদের পদচারণা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।’