ভোলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা আঙুলের ছাপ দিতে আসেন কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে। তবে বিদেশগামীদের অভিযোগ, ফি ছাড়াই আঙুলের ছাপ নেয়ার বিধান থাকলেও বিদেশগামীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
শুধু তা-ই নয়, আঙুলের ছাপ দিয়ে প্রিন্ট বের হতেই দেখা যায়, এক দেশের স্থানে চলে আসছে আরেক দেশের নাম। অর্থাৎ কাতার যাওয়া ব্যক্তির চলে আসে দুবাই। আবার সৌদি আরব যাওয়ার ব্যক্তির ক্ষেত্রে চলে আসছে সিঙ্গাপুর। সেটা সংশোধনের জন্যও বাড়তি টাকা গুনতে হয় বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
যদিও এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। তবু বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আরিফুজ্জান।
সৌদি আরবে যেতে ইচ্ছুক চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ চর-মাদ্রাজ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শাহিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি সৌদি আরব যেতে আগ্রহী। তবে আঙুলের ছাপ দেয়ার পর দেখা যায়, সৌদি আরবের স্থানে চলে এসেছে কাতার। অবশ্য মুহূর্তের মধ্যেই সমাধানের পথও দেখিয়ে দেন কাজটির দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী মো. শরিফ। দেশের নাম সংশোধনের জন্য অফিস ভবনের নিচেই থাকা মা কম্পিউটারে গিয়ে তা সংশোধন করে নিয়ে আসতে বলেন তিনি। সেখানে সংশোধনীতে বাধ্যতামূলক দিতে হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। এর সঙ্গে পূরণ করতে হয় জবশিকা নামে আরো একটি ফরম। তাতেও দিতে হয় ৩০০ টাকা।’
একই কাজে আসেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক। তিনি দেখতে পান তার ফিঙ্গার প্রিন্টে সৌদি আরবের স্থানে চলে এসেছে ওমান। সংশোধনের জন্য তাকেও পাঠিয়ে দেয়া হয় মা কম্পিউটারে।
আঙুলের ছাপে এক দেশের স্থানে আরেক দেশের নাম চলে আসার বিষয়ে অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. শরিফ হোসেন বলেন, ‘সবই হচ্ছে আমাদের কারসাজি। স্যার আমাকে যেভাবে বলেন, আমাকে তো সেভাবেই করতে হয়। যদিও কিছু কিছু সঠিকই প্রিন্ট বের করতে হয়। তা না হলে আবার মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।’
দেশের নাম সংশোধনের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা নেয়ার বিষয়ে মা কম্পিউটারের মালিক মো. বাবুরের ছেলে প্রান্ত জানান, ১ হাজার ২০০ টাকার ২০০ টাকা তারা পান। আর ১ হাজার টাকা অফিসপ্রধান মোশারফ স্যারকে তার বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন।
যদিও অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করেছেন অফিসপ্রধান মো. মোশারফ হোসেন।
ভোলার দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ গরিব মানুষ সহায়-সম্বল বিক্রি করে বিদেশ যান। তাদের কষ্টে উপার্জিত রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতি সমৃদ্ধ করেন। অথচ সেসব মানুষকে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের অসৎ কর্মকর্তারা দিনের পর দিন হয়রানি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’