কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক, কৌশলগত ও কূটনৈতিক পরাজয় হয়েছে। দেশটি তা মানতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশে অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘নতুন বাংলাদেশ’ কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিনের ওপর পর্যবেক্ষণ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ সম্পর্কে ভারতের নেতিবাচক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। আমরা মনে করি, ভারত তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও কৌশলগত পরাজয় মেনে নিতে পারবে না। এটা স্বীকার করার সাহস তাদের নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। আমরা আশা করছি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে।
তিনি বলেন, তারা (ভারত) এখনো বাংলাদেশকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে, যা বাংলাদেশের এই স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন করে। বাংলাদেশে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কিছু ক্ষেত্রে ভারতের গণমাধ্যম অনুঘটকের ভূমিকা পালনের জন্য এটি বিশাল ঝুঁকি তৈরি করেছে। অনেকের ধারণা ছিল ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন, জনগণ ও গণমাধ্যমে উদার চিন্তার প্রচার হয়। আমরা মনে করি, ভারত বদলে গেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশকে যেভাবে তুলে ধরছে তা অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য বিরক্তির কারণ। এটা বাংলাদেশ জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তবে আমরা এটাও মনে করি যে এটি ভারতের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর এবং লজ্জাজনক। তাই ভারতকে এ পথ থেকে সরে আসতে হবে।
ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তারা সব সময় দরজা উন্মুক্ত রাখার পক্ষে। আমরা সবসময় দরজা উন্মুক্ত রাখার কথা বলি। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী। আমরা ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তারা সব সময় দরজা উন্মুক্ত রাখার পক্ষে। আমরা সবসময় দরজা উন্মুক্ত রাখার কথা বলি। ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী। আমরা ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশকে এই ঝুঁকির কথা মাথায় রাখতে হবে।
গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে শাহজাদা এম আকরাম বলেন, কর্তৃত্ববাদের পতনের বাস্তবতা মেনে নিতে এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করতে ভারতের ব্যর্থতা এবং ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং সর্বোপরি ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সরকার ও বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। ভারত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলক ভুল তথ্য ও গুজব ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশে জোরালো প্রতিবাদ সত্ত্বেও সীমান্ত হত্যা অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ডিরেক্টর মুহাম্মদ বদিউজ্জামান ও টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। প্রতিবেদন তৈরিতে যুক্ত ছিলেন মো. জুলকারনাইন, ফারহানা রহমান ও মো. মোস্তফা কামাল।