আমদানি বাড়ায় চাহিদার তুলনায় বেড়েছে সরবরাহ। এতে তিনদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পাইকারি দরে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা করে। কয়েকদিনের ঊর্ধ্বমূখিতার পরে আবারো পেঁয়াজের দাম কমায় খুশি বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা। দাম যেন আরো কমে সেই দাবি তাদের। আমদানির এমন ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনে পেঁয়াজের দাম আরো কমবে বলে আশাবাদী আমদানিকারকরা।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ইন্দোর ও বেলোরি জাতের পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে আমদানির পরিমাণ বাড়ায় পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় কমতে শুরু করেছে। তিন দিন আগে প্রতি কেজি ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিছু খারাপ মানের পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সাউথের বেলোরি জাতের পেঁয়াজ আগে ১০২ থেকে ১০৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে পেঁয়াজ কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে চাহিদামতো সরবরাহ করে থাকি। বর্তমানে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ যেমন কিছুটা বেড়েছে তেমনি আগের তুলনায় দাম কমতে শুরু করেছে। দুই থেকে তিনদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকার মতো কমে গিয়েছে। তিন দিন আগে আমরা যে পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৯৮ থেকে ১০২ টাকা দরে ক্রয় করে মোকামে পাঠিয়েছিলাম, এখন সেই পেঁয়াজ দাম কমে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় নেমেছে। এতে করে আমরা যারা পাইকার রয়েছি তাদের জন্য পেঁয়াজ ক্রয় করায় অনেকটা সুবিধা হয়েছে। পেঁয়াজের দাম কমের কারণে মোকামে পেঁয়াজ ক্রয়ের আদেশ যেমন বেশি আসছে তেমনি আমাদের পুঁজি কম লাগছে। তাই বাড়তি পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। যার কারণে আমাদের আয় খানিকটা বেড়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছেন বন্দরের আমদানিকারকরা। তবে ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে সে দেশের বাজারেই পেঁয়াজের সরবরাহ কম ছিল। তাই দাম বাড়তির দিকে ছিল। এর ফলে বাড়তি দামে আমদানি করতে হওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছিল। সেই সঙ্গে চাহিদা মোতাবেক আমদানি করতে না পারায় দাম ঊর্ধমুখী ছিল। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী ও সরবরাহ কমের কারণে ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার কারণেও দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এমন অবস্থায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান যে শুল্ক ছিল সেটি প্রত্যাহার করে নেয়ায় পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা। এর আগে বন্দর দিয়ে ৫ থেকে ১০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক করে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এতে করে দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। এছাড়াও আমদানিকৃত পেঁয়াজের মান খারাপ হওয়ার কারণে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সামনের দিনে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি আরো বাড়বে।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচাপণ্য তাই ভারত থেকে পেঁয়াজবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশের পর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করলে দ্রুত সেই পেঁয়াজের পরীক্ষণ শুল্কায়ন সম্পন্ন করা হয়। আরোপিত শুল্ক পরিশোধ করা সাপেক্ষে দ্রুত যেন বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে বাজারজাত করতে পারেন সেজন্য সবধরনের ব্যবস্থা রেখেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার বন্দর দিয়ে ৩২টি ট্রাকে ৯৩৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।