বাংলাদেশের তরুণ সমাজের ৮৪ শতাংশেরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি পরিচালনায় দক্ষতা নেই। তরুণদের অনেকেই জানেন না, এআই কী এবং কীভাবে কাজ করে। অথচ তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে এআই দক্ষতা থাকা অতি জরুরি। চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এ বিষয়ে দক্ষতার বিকল্প নেই।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় এআই’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কর্মশালায় আলোচক ছিলেন নেটকম লার্নিংয়ের সিনিয়র ম্যানেজার (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) ইমদাদুল ইসলাম ও লার্নিং কনসালটেন্ট হাসান মো. জুবায়ের।
কর্মশালায় মার্কিন গবেষণা ও পরামর্শ প্রতিষ্ঠান গার্টনার-এর প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ ভাগ এইচআর বিভাগ নিয়োগ কার্যক্রমে কোনো না কোনোভাবে এআইর সহযোগিতা নিয়ে থাকে।
এছাড়া জানানো হয়, অ্যামাজনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অটোমেশন এবং এআই একজন কর্মীর বার্ষিক ২৪৫ ঘণ্টা বা ৬ সপ্তাহ সময় সাশ্রয় করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারের একটি পাইলট প্রোগ্রামের তথ্য ভুল ধরে বলা হয়, ইউনিলিভার নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কাজে একটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যেটি আবেদনকারীদের (চাকরিপ্রার্থী) ভিডিও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাদের মুখের অভিব্যক্তি, শব্দ ও বক্তব্যের ধরন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এতে দেখা গেছে, নিয়োগকারীদের কাজের চাপ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। ফলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এবং এইচআর বিভাগ এখন এআই প্রযুক্তির দিকে ধুঁকছেন। সেজন্য চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে তরুণদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা থাকতে হবে।
এ সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাকরিপ্রার্থীদের অনেকগুলো সিভি থেকে কীভাবে দক্ষদের সিভি বাছাই করা হয়, কীভাবে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিশ্লেষণ করা হয় সেটি দেখানো হয়। এছাড়া চাকরিপ্রার্থী সম্পর্কে এআইর মূল্যায়নও তুলে ধরা হয়।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিসিআইর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের শিল্প খাতের জন্য এআই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুব সমাজ আমাদের দেশের জন্য একটি শক্তির জায়গা। আমাদের বর্তমান কর্মসংস্থান ধরে রাখা ও বৃদ্ধি করতে প্রাযুক্তিক জ্ঞান বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কারণ, আগামীর বিশ্ব এআই প্রযুক্তি নির্ভর হবে। দিন দিন প্রযুক্তি আরো উন্নত হবে। আমরা এরই মধ্যে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে পদার্পণ করেছি। এখন এআই প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই।
বিসিআইর সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আইএমএফের ২০২৪ সালের সার্ভে অনুযায়ী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সূচকে ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩তম। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের যুবকদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৮৪ শতাংশ তরুণের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি পরিচালনায় উপযুক্ত দক্ষতা নেই। আমাদের এআইর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো ভালোভাবে চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক জাহাঙ্গির আলম ও মো. মাফুজুর রহমান।
কর্মশালায় বিসিআইর সদস্য ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ২৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। বিকালে অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদ তুলে দেনে বিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী।