যে সময় শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে বিক্রির কথা, সে সময় আবাদের জন্য খেত প্রস্তুত করছেন চাষীরা। কারণ গত দুই মাসে অতিবৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় লক্ষ্মীপুরে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে সবজির গাছ ও চারা। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন করে সবজি চাষ করছেন কৃষক। যদিও খরচ অনুপাতে কাঙ্ক্ষিত দাম নিয়ে শঙ্কায় তারা। চাষীরা বলছেন, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এবার বাজারে দেরিতে আসবে শীতকালীন সবজি।
প্রতি বছর আগাম বাজার ধরতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর, কালীরচর, লাহারকান্দি ও ভবানীগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সবজির আবাদ করেন চাষীরা। চলতি মৌসুমেও লাউ, বরবটি, ঢেঁড়শ, লালশাক, মূলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম ও করলাসহ শীতকালীন সবজির আবাদ করেন এখানকার কৃষক। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অতিবৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় সবজির চারা নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পানি নামলেও এখনো নিচু ফসলি জমি জলাবদ্ধ রয়েছে। যেসব খেতের পানি সরেছে, সেখানে সবজি চাষে আবারো প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক।
কৃষক বলছেন, আশ্বিনের মাঝামাঝি শীতের আগাম সবজি চাষ করে কয়েক দফায় তাদের চালানের টাকাও উঠে যেত। কিন্তু অতিবৃষ্টি এবং বন্যায় তাদের সব শেষ। ঋণ করে সবজির আবাদ নিয়ে এখন বিপাকে তারা।
সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের কালীর চর গ্রামের কৃষক সেকান্তর মিয়া জানান, দেড় লাখ টাকা খরচ করে এবার আগাম সবজি চাষ করেছিলেন তিনি। অসময়ে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ডুবে তার সব সবজির চারা নষ্ট হয়েছে। বন্যার পানি নামলেও খেত এখনো শুকায়নি। আবারো সবজি চাষে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
পরিবেশবিদ সানা উল্যাহ সানু বলেন, ‘শীতের শুরুতে জেলার পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাঠজুড়ে সবজি ভরপুর থাকত। কিন্তু এখন মাঠ খালি। বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে খেতেই পচে নষ্ট হয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, লাউসহ আগাম সবজি। ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না অনেক কৃষক। আবাদ করবেন কোথা থেকে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজিসহ অন্তত ১২ ধরনের সবজির আবাদ করেন চাষীরা। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় এবার ১ হাজার ৩৯ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি বছর ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সবজির আবাদ হয়েছে মাত্র ৭৩০ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন জানান, অতিবৃষ্টি এবং বন্যায় শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উফশী জাতের ফসলের জন্য প্রায় ২০ হাজার কৃষক ও হাইব্রিড জাতের ফসল আবাদের জন্য ৩৮ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। দ্রুত প্রণোদনা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে পৌঁছানো হবে।’