পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে মালিকদের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার পরও থামছে না অসন্তোষ। বিশেষ করে অক্টোবরে বকেয়া বেতন দাবিতে পোশাক খাতে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। গাজীপুরের শ্রীপুরে বেতন পরিশোধ ছাড়াই কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে গতকালও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। আন্দোলনের মুখে দুটি কারখানার ১৯০ শ্রমিককে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, কারখানায় বিশৃঙ্খলা ও ভাংচুরের অভিযোগে ৯ নভেম্বর এমএম নিটওয়্যার লিমিটেড এবং মামুন নিটওয়্যার লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ১১৩ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করে। কারখানা কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফায় আরো ৭৭ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ সার্ভিস বেনিফিট ফেরত দেয়ার শর্তে চাকরিতে যোগদানের কথা জানায়। গতকাল সকাল থেকে কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেন।
এমএম নিটওয়্যার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের মধ্যে যারা সার্ভিস বেনিফিট ফেরত দিয়েছেন শুধু তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। যারা সার্ভিস বেনিফিট ফেরত দেননি তারা কাজে যোগদান করেননি।’
এর আগে ৩ নভেম্বর হাজিরা বোনাস, নাইট বিল, টিফিন বিলসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থান নেন। এ সময় শিল্প পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বুঝিয়েও কাজে ফেরাতে পারেনি। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। এ সময় বিশৃঙ্খলা ও ভাংচুরের অভিযোগে দুই দফায় ১৯০ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।
এদিকে শ্রীপুরে বেতন পরিশোধ ছাড়াই কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে উপজেলার আবদার গ্রামের জৈনাবাজারে এইচডিএফ অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা জৈনাবাজার-কাওরাইদ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে বেলা ১১টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কারখানার শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, অক্টোবর ও চলতি মাসের বেতন বকেয়া তাদের। কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
শ্রমিক নাজমা আক্তার বলেন, ‘বেতন দেয়ার কথা বলে প্রায় দুই মাস আমাদের ঘোরাচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। মাস শেষ হলে দোকানের বকেয়া ও বাড়িওয়ালা ভাড়া পরিশোধের জন্য চাপ দেন। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। এজন্য রাস্তায় নেমে এসেছি।’
এ ব্যাপারে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধের আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন।’