কর্মবিরতিতে ট্রেন কন্ট্রোলাররা

ট্রেন অপারেশনে চরম সংকটে বাংলাদেশ রেলওয়ে

সারাদেশে প্রায় দুইশ এর মতো কন্ট্রোলার কাজ করলেও বাড়তি শূণ্য পদ থাকায় স্টেশন মাস্টার সহ বিভিন্ন রানিং স্টাফদের এনে কাজ করানো হয়।

রানিং স্টাফদের (ট্রেন চালক, গার্ড ও অন্যান্য) নিয়মের বেশি কাজ থেকে বিরত থাকা, নতুন ট্রেন চালকদের কর্মবিরতির পর এবার ট্রেন কন্ট্রোলাররাও কর্মবিরতিতে গেছে। ট্রেন অপারেশনের অত্যাবশ্যকীয় এসব কর্মীদের অসন্তোষে নাজুক হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন পরিষেবা। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া ট্রেন কন্ট্রোলারদের শর্তহীন কর্মবিরতিতে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এর আগে ১ ডিসেম্বর থেকে রানিং স্টাফরা মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে যায়। যার কারণে কয়েক দিনে সারাদেশের শত শত ট্রেনের যাত্রা বাতিল ছাড়াও পথিমধ্যে ও যাত্রা শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। রানিং স্টাফদের কর্মসূচিতে কোন রকমে ট্রেন সার্ভিস চালু রাখা গেলেও কন্ট্রোলারদের কর্মবিরতিতে ট্রেন চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

ট্রেন কন্ট্রোলারদের দাবি, ‘কঠিন প্রকৃতির কষ্টসাধ্য দায়িত্ব’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৬৮ সালে তৎকালীন সরকার ট্রেন কন্ট্রোলারদের মূল বেতনের সঙ্গে ৩০ টাকা অতিরিক্ত ভাতা দেয়া শুরু করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৩০ টাকার পরিবর্তে কন্ট্রোলারদের তিনটি অগ্রিম ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৮০ সাল থেকে চারটি অগ্রিম ইনক্রিমেন্টকে ‘পার্ট অ্যান্ড পার্সেল পে’ হিসেবে গণ্য করে কন্ট্রোলারদের দিয়ে আসছে রেলওয়ে। ট্রেন কন্ট্রোলারদের এসব সুবিধা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে ২৪ ঘণ্টা পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করা ট্রেন অপারেশনের কর্মীরা।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সহ ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতির প্রসঙ্গে রেলওয়েতে কর্মরত টিএনএল, ডিটিএনএল ও সিটিএনএল কর্মীদের প্রতিনিধি হোসেন খালেদ সাইফুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, একজন কন্ট্রোলার উৎসব, ঝড়, বৃষ্টি, যুদ্ধ, জরুরী অবস্থা, মহামারী সহ যেকোন দুর্যোগকালে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে পেয়ে আসা সুবিধাগুলো কোনো কারণ ছাড়াই বাতিল করা হয়েছে। কন্ট্রোলাররা দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকলে সারাদেশের ট্রেন অপারেশনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। দাবিগুলো ফিরিয়ে দেয়া হলে কন্ট্রোলাররা দায়িত্ব পালন শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় দুইশ এর মতো কন্ট্রোলার কাজ করলেও বাড়তি শূণ্য পদ থাকায় স্টেশন মাস্টার সহ বিভিন্ন রানিং স্টাফদের এনে কাজ করানো হয়। কন্ট্রোলাররা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় রানিং স্টাফদের দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। তবে দক্ষ কন্ট্রোলারদের অভাবে সীমিত পরিসরে ট্রেন অপারেশন চালানো গেলেও যেকোন সময় বড় দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। সময়ের আশ^াসের পরিবর্তে লিখিত নির্দেশনা ছাড়া কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানিয়েছেন কন্ট্রোলাররা।

আরও