ব্রিফিংয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বৈষম্য ও অবহেলার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কারিগরি শিক্ষা

দেশে বৈষম্য ও অবহেলার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কারিগরি শিক্ষা—গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

দেশে বৈষম্য ও অবহেলার প্রকৃষ্ট উদাহরণ কারিগরি শিক্ষা—গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারও দায়িত্ব নেয়ার পর কারিগরি শিক্ষা নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে।

গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা: বর্তমান পরিস্থিতি ও সংস্কার চিন্তা’ শীর্ষক প্রেস ব্রিফিংয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষায় অবহেলা আমাদের পীড়া দেয়। নীতিপ্রণেতাদের কাছে আমরা এ ব্যথা পৌঁছাতে চাই। কারিগরি শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন, সেখানেও রোগের উপসর্গ নিরাময়ের দাবি রয়েছে। মূল সমস্যা সমাধান করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।’

কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন অর্জনে কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে যুগোপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরি, উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ এবং কারিগরি শিক্ষাকে মূল ধারার শিক্ষায় যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন না হওয়াকে জাতীয় ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা কেবল টেকনিক্যাল বিষয় নয়। এর মধ্যে মূল্যবোধ থাকে। এটার মধ্যে বিশ্বদীক্ষা থাকে। পৃথিবী, মানুষ ও দেশকে আমরা কীভাবে দেখি—এসব বিষয় থাকে। এটার ভেতর ইতিহাস থাকে। বর্তমান উত্তরণকালে বিষয়গুলো অনেক আলোচিত। কোনো ক্ষেত্রে এটি বিতর্কের জায়গায়ও চলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটে পুরো শিক্ষা খাতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ আছে তার মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কারিগরি শিক্ষার জন্য। আবার সেখানেও অগ্রাধিকার পাচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ফলে মানসম্মত শিক্ষার অভাব বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।’

সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সংস্কার আসলে কতটুকু হচ্ছে তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো আগামীর রাজনৈতিক ইশতেহারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে স্পষ্ট আলাপ থাকতে হবে। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে মোট জিডিপির ৩ থেকে ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে এমন নয়। কারিগরি শিক্ষার বৃত্তি, যন্ত্রাংশ ক্রয় ও অবকাঠামো উন্নয়নে কত টাকা ব্যয় করা হবে সেটি স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।’

এ সময় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন করলে উন্নত দেশ গঠন বাধার মুখে পড়বে। কারিগরি শিক্ষায় দেশের উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত করে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্কনীতি বাংলাদেশের জন্য বিনিয়োগ সুবিধা তৈরি করবে। ২০১৬ সালে আমেরিকা শুল্ক বৃদ্ধি করলে চীন তাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ভিয়েতনামে নিয়ে যায়। এখনো একই পরিস্থিতি তৈরি হবে। চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশসহ এ স্তরের অন্য দেশগুলোয় আসবে। কিন্তু আমাদের দক্ষতার সঙ্গে সেটি ধরতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নাগরিক প্লাটফর্মের নেটওয়ার্ক ফোকাল পয়েন্ট তারান্নুম জিনান, সিপিডির গবেষণা সহযোগী শৌর্য তালুকদার ও নাইমা জাহান তৃষা, সংলাপ সহযোগী রিফাত বিন আওলাদ ও রিসার্চ ইন্টার্ন মালিহা রহমান।

আরও