বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেছেন, একদিকে সংস্কার জরুরি, অন্যদিকে প্রক্রিয়াগতভাবে আইনের মাধ্যমে, বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা জরুরি। কারণ আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শাসক হিসেবে আমাদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। যারা হেলিকপ্টার থেকে নির্দেশ দিয়ে সরাসরি গুলি বর্ষণ করতে পারে, তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারে না। কোনো দেশেই রাজনৈতিক দল রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় স্থায়িত্ব পাবে — এটা হতে পারে না। আওয়ামী লীগ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, সুতরাং গণহত্যার বিচার যদি দ্রুত হয়ে যায়, সে আইনে যে রায় আসবে, খুব স্বাভাবিকভাবে সে আইনেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এজন্য বাংলাদেশে সংস্কার, দ্রুত বিচার ও দ্রুত নির্বাচন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সবকিছু একসঙ্গে না হলে ফ্যাসিবাদ আবার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। ওই সুযোগ বাংলাদেশে যাতে না হয়, সকল রাজনৈতিক দলকে বৃহত্তর স্বার্থে একই টেবিলে বসা খুব জরুরি।
শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদরের হাজিরপাড়া মোহাম্মদীয়া (সা.) কমপ্লেক্স দাখিল মাদ্রাসার উদ্যোগে দাখিল পরীক্ষার্থীদের দোয়া ও বার্ষিক মেধাভিত্তিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে এ্যানী বলেন, আমাদের ছাত্র ভাইয়েরা আন্দোলন করেছে এবং রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছে। সকল রাজনৈতিক দলের রিয়েলাইজ করা উচিত, এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যেখান থেকে সামান্যতম বিরোধ তৈরি হতে পারে। কারণ আমাদের বৃহত্তর স্বার্থ দেখতে হবে, ক্ষুদ্র স্বার্থ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
‘সংস্কার হবে না — এ কথা বিএনপি কখনো বলেনি’ উল্লেখ করে এ্যানী বলেন, বিগত ৫ বছর বিএনপি বারবার বলে আসছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে একগেয়েমিতা আছে। এক ব্যক্তির শাসন চলতে পারে না। একদলীয় শাসনে ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদ আছে। এক ব্যক্তির শাসনেও ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদ আছে। যার ফলে বিএনপি ৩১ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠন করতে চেয়েছে। তাই সংস্কার যেন বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থায় থাকে। নতুন শাসনব্যবস্থা এবং নতুন সুশাসনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ যেন পরিচালিত হতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমান শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হবে না। রাজনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইচ্ছে করলেও বন্ধ করা যায় না। এসব টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হলে এবং প্রশাসনিক সংস্কার ও সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হলে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া বেশি জরুরি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বেশি বেশি আলোচনায় বসা দরকার। এ ক্ষুদ্র আলোচনা বৃহত্তর আলোচনায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে বৃহত্তর স্বার্থে দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বিএনপির এ নেতা।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ড. রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন হাজিরপাড়া মোহাম্মদীয়া (সা.) কমপ্লেক্স দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মীর হোসাইন আল আজহারীসহ অনেকে।