পুঁজি সংকটে বিক্রমপুরের তামা-কাঁসা শিল্প

গত তিন দশক ধরে কাঁসা ও তামা শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিক্রমপুর নাগেরহাটের শুভঙ্কর পাল।

গত তিন দশক ধরে কাঁসা ও তামা শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিক্রমপুর নাগেরহাটের শুভঙ্কর পাল। এ শিল্পের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্ক প্রায় ১৫০ বছর। তিনি পঞ্চম প্রজন্ম। কালের অতলে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এ শিল্পটি। তবু চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাপ-দাদার আমলের শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখার। তবে যুগের পরিবর্তনে চাহিদা কমে যাওয়ায় কদর কমেছে এ তামা-কাঁসার তৈজসপত্রের। পুঁজি হারিয়ে পেশা বদল করেছেন অনেকেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এ শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন শুভঙ্কর পাল।

একসময় স্বর্ণের পরই ছিল তামা-কঁাসার অবস্থান। ছিল আভিজাত্যের মর্যাদা। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই তামা-কাঁসা শিল্প এখন হারাতে বসেছে তার অস্তিত্ব। মাত্র দু-তিন দশক আগেও এসব ধাতব পণ্যের যে সমাদর ছিল, তা যেন কালের অতলে হারিয়ে গেছে। এখন তা খুঁজে পেতে রীতিমতো করতে হয় অনুসন্ধান। শ্রমিকের হাতুড়ির শব্দ আর ঝনঝনানি আওয়াজে এখন আর ঘুম ভাঙে না কারো। লৌহজংয়ের দিঘলীর পালের বাজার, নাগেরহাটের নাগ পরিবারও যেন ঝিমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই। লৌহজংয়ের দিঘলীর পালের বাজার ও নাগেরহাটের অর্ধশতাধিক তামা-কাঁসাসহ পিতলের দোকান এবং কারখানা এখন আর নেই। তবে যে কয়েকটি টিকে আছে, অর্থাভাবে ধুঁকছে।

কারখানা মালিকদের দাবি, এ শিল্প বাঁচাতে এবং তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে সরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে এলে এবং সল্প সুদে সহজ উপায়ে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করলে শিল্পটি টিকে থাকবে।

তবে মুন্সিগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এ শিল্পকে ধরে রাখতে আর্থিক সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকশ বছরে দেশের বিভিন্ন জনপদে কাঁসা-পিতলের সামগ্রী তৈরি কারখানা বিস্তৃত হয়েছিল। ঢাকার ধামরাই ও শিমুলিয়া, টাঙ্গাইলের কাগমারি, জামালপুরের ইসলামপুর, বগুড়ার শিববাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের লৌহজংসহ বিভিন্ন এলাকায় এ শিল্পটি গড়ে ওঠে। তবে কয়েক দশকে এসব এলাকা থেকে শিল্পটি বিলুপ্ত হয়েছে। আবার কোথাও টিকে থাকলেও তা টিম টিম করে প্রদীপের মতো জ্বলছে। এ শিল্পের প্রচলন প্রথমে শুরু হয়েছিল বিক্রমপুর থেকেই। তাই লৌহজংয়ে যে চারটি কারখানা টিকে আছে, তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হবে।’

নির্মল রায় নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘একসময় হাঁড়ি, পাতিল, পূজার বাটা, মালসা, পূজার কলস, গ্লাস, থালা, পানের বাটা, মগ, কুপি, কলস, চারি  নানা পণ্য তৈরি করা হতো। এসব তৈজসপত্রের খুব কদরও ছিল। আজ কালের অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব পুরনো ঐতিহ্য। এখন কনকসারের দুটি কারখানায় মাত্র চার-পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে চলছে এ ব্যবসা।’

উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, একসময় বিশ্বজুড়েই তামা-কাঁসার ব্যবহার ছিল। ভারত উপমহাদেশেও সেই চর্চার বিস্তৃতি ঘটে স্বাভাবিকভাবেই। ভারত উপমহাদেশে ১৮ ও ১৯ শতকে ব্রিটিশ শাসনামলে তামা-কাঁসা সামগ্রী রীতিমতো আভিজাত্যের প্রতীক ছিল। ব্যয়বহুল এসব ধাতব সামগ্রী সাধারণের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। মূলত সমাজের বিত্তশালী ও প্রভাপশালী আর সনাতন ধর্মের মানুষই এসব পণ্য ব্যবহার করত বেশি।

আরও