গত বছরের বিভিন্ন সময়ে বান্দরবানের চার থানার করা ৪টি মামলায় ৩২ জঙ্গির জামিন দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ধার্য তারিখে শুনানি শেষে জঙ্গিদের জামিনের নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. মোসলেহ উদ্দিনের আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পেশকার মো. নুরুল আবছার।
জামিন পাওয়া ৩২ আসামির মধ্যে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার মূল নেতা মো. শামীন মাহফুজ রয়েছেন। পুলিশের করা মামলার এজাহারে তার ঠিকানায় উল্লেখ রয়েছে, তিনি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া এলাকার মো. আজিজ উদ্দিনের ছেলে।
গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি জেলার থানচি উপজেলার তংমাতুঙ্গিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন বলেছিলেন, রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের সিলোপিপাড়া এলাকায় শারক্কীয়া ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা বম পার্টির সঙ্গে র্যাবের গোলাগুলির ঘটনায় শারক্কীয়ার আট সদস্য আহত হয়েছেন। ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও তাদের প্রশ্রয়দাতা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। এ পর্যন্ত জঙ্গি সংগঠনের ৪২ সদস্য ও কেএনএফের ১৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অভিযান প্রায় ৮০ শতাংশ সফল। গোয়েন্দা তৎপরতাসহ নানা তৎপরতা অব্যাহত থাকায় বর্তমানে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের রুমা থানা পুলিশের করা মামলায় ঘটনা উল্লেখ করা হয় ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ২৩ তারিখ। এরপর মামলা করা হয় পরের বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখ। এ মামলায় এজাহার নামীয় আসামি ২০ জন। ওই (জানুয়ারি) মাসের ২৪ তারিখ এজাহারে ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ। এ মামলার ঘটনা উল্লেখ রয়েছে আগের দিন ২৩ তারিখ। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ ৩১ জনকে আসামি করে মামলা করে থানচি থানা পুলিশ। মামলাটিতেও ঘটনা উল্লেখ রয়েছে আগের দিন ৭ তারিখ। পরের মাস মার্চের ১৩ তারিখ ঘটনা উল্লেখ করে ৩১ জনকে এজাহারে আসামি করে মামলা করে বান্দরবান সদর থানা পুলিশ।
জামিন পাওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আলমগীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের দীর্ঘদিন আয়নাঘরে আটকে রাখার পর পাহাড়ে এনে জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতার দেখানোর আগে বিভিন্ন জনকে ৫-৬ মাস বা এক বছর পর্যন্ত আয়নাঘরে রাখা হয়।
আইনজীবী আলমগীর বলেন, জঙ্গি কার্যক্রম দমন দেখিয়ে বহির্বিশ্বের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া ও ক্ষমতা ধরে রাখার অপচেষ্টা করেছিল স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা হওয়ায় কোনো মামলায় এখনো চার্জশিট দেয়া হয়নি। জামিন পাওয়া আসামিরা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও কাশিমপুর কারাগারে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আইনজীবী মো. ইকবাল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, জামিন আদেশের কপির নকল সংগ্রহের পর পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।