গত দেড় দশকে জ্ঞানের রাজ্যে ব্যাপক অনাচার চলেছে, যা ঘটেছে সেটিকে রীতিমতো জ্ঞানের রাজ্যে জেনোসাইড বলা চলে। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান এ অনাচার থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। এখনো নন-ফিকশন বই নিয়ে পত্রপত্রিকায় আলোচনা খুব কম হয়। গ্রন্থ পর্যালোচনা বলে বাংলাদেশে এখন কিছুই হয় না। যদিও নন-ফিকশন বই ক্রমাগত মূল্যবান হয়ে উঠছে। জাতীয় গ্রন্থাগার, পাবলিক লাইব্রেরিগুলো যদি এ ধরনের বই ঠিকঠাক কেনা বা প্রচারের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে ক্ষমতাসীনদের দিয়ে প্রভাবিত হওয়ার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, সেটি থেকে দেশ মুক্ত হবে।
বণিক বার্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অষ্টম নন-ফিকশন বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে গতকাল অতিথিদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে এসেছে। মেলাটি শনিবার শুরু হয়ে গতকাল শেষ হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের নন-ফিকশন বই আরো অনেক বেশি পড়া দরকার। ক্রমান্বয়ে আমরা ফেসবুকের তথ্যনির্ভর জাতিতে পরিণত হয়েছি। নন-ফিকশন বই না থাকলে আমাদের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে না। গত ১৫ বছরে আমাদের জ্ঞানের রাজ্যে যে অনাচার চলেছে, সেটি নিয়ে আমরা বলতে পারি জ্ঞানের রাজ্যে জেনোসাইড (গণহত্যা) হয়েছে। আমি কিছুদিন আগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে গ্রন্থ কেন্দ্রে গত দুই বছরের ক্রয়কৃত বইয়ের তালিকা চাইলাম। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কী কী বই রাখে, ঘুরে দেখলাম। আশ্চর্যজনকভাবে দেখলাম, সেখানে কেনা বইগুলোর মধ্যে ৯৫ শতাংশই নন-ফিকশন। এবং এই ৯৫ শতাংশের ৯৫ শতাংশই হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা বা তাদের পরিবারকে নিয়ে। এমনকি বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ওপরও প্রায় ২০-২৫টা বই আছে। এখানে একটা অনাচার চলেছে। জঘন্য অকথ্য মানের বই কেনা হয়েছে, যেখানে কোনো ধরনের গবেষণা নেই।’
এবারের মেলায় দেশের মোট ৩৯টি প্রকাশনা ও গবেষণা সংস্থা অংশ নিয়েছে। অংশ নেয়া প্রকাশকদের মনোনীত বই থেকে বিচারক প্যানেল ২০২৪-এর চারটি নন-ফিকশন বই নির্বাচিত করে ‘নন-ফিকশন গ্রন্থ সম্মাননা ২০২৪’ প্রদান করা হয় গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠানে। চার সদস্যবিশিষ্ট এক জুরি বোর্ড বইগুলোকে নির্বাচন করেন। এ জুরি বোর্ডের প্রধান ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক। বোর্ডের অন্য তিন সদস্য ছিলেন অধ্যাপক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, ফারুক মঈনউদ্দীন ও অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম। পেশাগত কাজে রাজধানীর বাইরে থাকায় মারুফুল ইসলাম গতকালের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বণিক বার্তা গত আট বছর ধরে এ আয়োজন করে আসছে। জনপ্রিয় বই এখানে গুরুত্ব দেয়া হয় না। বরং যে বই মানুষের চিন্তা, ভাবনা ইত্যাদির জাগরণ ঘটায়, সে রকম বই-ই এ মেলায় বিশেষভাবে থাকে। বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে জনপ্রিয় লেখক ও জনপ্রিয় বইয়ের অভাব নেই। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় যেগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে কাজে লাগবে, এমন বইয়ের পাঠক, লেখক কম। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়। পৃথিবীর সব দেশেই তথ্য এবং গবেষণামূলক লেখার প্রসার ও বিক্রয় কম হয়। এসব দিক বিবেচনা করেই আমাদের জাতীয় মননের পরিবর্তন এবং জাতীয় উন্নতি ও ঐক্যের লক্ষ্যে বণিক বার্তা এ আয়োজন করে আসছে। এটি অবশ্যই একটি শুভ উদ্যোগ।’
অধ্যাপক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, ‘এবার যেসব বই পেয়েছি, সৃজনশীলতায়, চিন্তাশীলতায় ও ভাষা প্রয়োগের দিক থেকে গত বছরের তুলনায় সেগুলোর গড় মান ভালো। আমি বইয়ের ক্ষেত্রে দেখি উদ্ধৃতি দেয়ার মতো এমন বাক্য আছে কিনা, যেটি অন্য কেউ বলেনি। অনেক ভালো বই থাকে। তবে উদ্ধৃতিযোগ্য কোনো কিছু যদি না থাকে, তাহলে সে বই আমার কাছে একটু মূল্যহীন হয়ে দাঁড়ায়। বণিক বার্তা ও প্রকাশকদের ধন্যবাদ এ আয়োজনের জন্য।’
ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের কাছে নভেম্বরে বইগুলো আসে। ফলে নভেম্বর ও ডিসেম্বর—এ দুই মাসে প্রকাশিত বইগুলো বাছাইয়ের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। আমরা ১০ মাসের বই পাই। বণিক বার্তা এটার কোনো সমাধান দিতে পারে কিনা! আরেকটি বিষয় হলো, একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি ও নবীন লেখকদের মাঝে তুলনা করা কঠিন। এখানে একটা বয়সের বিভাজন যদি করে দেয়া যায়, তাহলে তা জুরি বোর্ডের সদস্যদের জন্য সুবিধা হয়।’
এবারের নন-ফিকশন বইমেলার সম্মাননাপ্রাপ্ত বিজয়ী গ্রন্থ ও লেখকরা হলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সাতচল্লিশের দেশভাগে গান্ধী ও জিন্নাহ’; সিরাজ উদ্দিন সাথীর ‘বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতি: মওলানা ভাসানী ও বেহাত বিপ্লব’; অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ‘অর্থশাস্ত্র: ইতিহাস দর্শন রাষ্ট্রনীতি’ এবং প্রয়াত হায়দার আকবর খান রনোর ‘সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ: ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি’।
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বইয়ের এখন মর্যাদা ও আকর্ষণ কমেছে—সবই সত্য। কিন্তু এটাও সত্য যে বই ছাড়া মানুষের চলবে না। বই মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশ, চর্চা ও অনুশীলনে সহযোগী। আমরা দেখছি, নন-ফিকশন বই ক্রমাগত মূল্যবান হয়ে উঠছে। এখন অনেক বাণিজ্য বেড়েছে। কিন্তু বাণিজ্যের মধ্যে যে মানবিকতার চর্চা দরকার, এই বইয়ের মেলা আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা শুনছি। কিন্তু মানবিক বুদ্ধিবৃত্তির যে চর্চা, সেই চর্চা আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চর্চা এক নয়। কাজেই মানুষ যতদিন কল্পনা করবে ও কল্পনা করার শক্তি লাগবে, চিন্তা করার শক্তি লাগবে, ততদিন সে মানুষ থাকবে এবং ততদিনই এ বইয়ের প্রয়োজন হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখানে কুলাবে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও লুণ্ঠন সারা পৃথিবী ও বাংলাদেশেও সত্য। এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে জ্ঞানের চর্চা করতে হবে। সেই জ্ঞানের চর্চার ক্ষেত্রে বই প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে নন-ফিকশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বণিক বার্তা নন-ফিকশন বইমেলা যেটি করে সেটির গুরুত্ব আমরা দিনে দিনে, বছরের পর বছর আরো বুঝতে পারছি। বইয়ের ক্ষেত্রে লেখকদের প্রধান অনুপ্রেরণা হচ্ছে পাঠক। পাঠকরা যদি বই না পড়ে তাহলে লেখকদের কোনো উৎসাহ থাকে না। লিখতে গেলেও অনেক সমস্যা হয়। পাঠকদের কাছে পৌঁছানোটা অনেক কঠিন। বিশেষ করে নন-ফিকশন বই নিয়ে পত্রপত্রিকায় আলোচনা খুব কম হয়। রিভিউ তো হয়ই না। গ্রন্থ পর্যালোচনা বলে বাংলাদেশে এখন কিছুই হয় না। সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি। এখানে মিডিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যেটি পালন করা দরকার। সরকারেরও কিছু উদ্যোগ নেয়া দরকার। যেমন জাতীয় গ্রন্থাগার, পাবলিক লাইব্রেরিগুলো যেন ঠিকঠাক বই কেনা বা বই প্রচারের যে দায়িত্ব, সেটি পালন করা। তাহলে ক্ষমতাসীন সরকারের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার যে সংস্কৃতিটা তৈরি হয়েছে, সেটি থেকে দেশ মুক্ত হবে। লাইব্রেরি এবং জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রগুলো তাদের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করবে। গণমাধ্যম বইপত্রের বিষয়ে একটু মনোযোগ দেবে। যেসব বিষয় আলোচনা হচ্ছে, নতুন তাত্ত্বিক বিষয়গুলো সামনে আসছে, সেগুলো যদি পরিচিত না হয়, আলোচিত না হয় সমাজের মধ্যে তাহলে দেশ কীভাবে অগ্রসর হবে? সমাজ কীভাবে অগ্রসর হবে? সেই পরিপ্রেক্ষিতে নন-ফিকশন বইমেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বণিক বার্তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী বলেন, ‘এখানে আসতে পেরে ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত। আমার বই “মওলানা ভাসানী ও বেহাত বিপ্লব” বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, এটি আমার জন্য খুশির বিষয়। আমার এই বইটি লেখা বোধ হয় সার্থক হলো। এই বই লেখার অনুপ্রেরণায় ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এবং পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেই সময়টাকে যেভাবে দেখেছি এবং মওলানা ভাসানীর জীবন ইতিহাসকে আমি যেভাবে অধ্যয়ন করেছি; এই দেশে একটা বিপ্লব হতে পারত। মোক্ষম সে সুযোগটি আমাদের হাতছাড়া হয়েছে। সেজন্য “বেহাত বিপ্লব” শব্দটা আমি ব্যবহার করেছি। আমি মনে করি মওলানা ভাসানীকে জাতীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তার বিশাল ভূমিকা। শৈশব থেকে শুরু করে বাংলা এবং আসামে জাতীয় পর্যায়ে এমন একটি আন্দোলন হয়নি যেখানে মওলানা ভাসানী ছিলেন না। আমি দেখলাম তাকে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে তার নাম মুছে দেয়া হয়েছে। তার নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে তার নাম মুছে দিয়ে অন্য নাম দেয়া হয়েছে। সে কারণে আমি মওলানা ভাসানীকে নিয়ে লিখেছিলাম। বণিক বার্তার এ আয়োজনের পর আমি আজকে মনে করি, আমার লেখাটা সার্থক হয়েছে। যারা এমন একটি অনুভূতি আমাকে দিলেন, তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
প্রয়াত হায়দার আকবর খান রনোর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার ভাইয়ের মেয়ে অনন্যা লাবণী। সম্মাননার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের পক্ষ থেকে বণিক বার্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বইটিকে পুরস্কৃত করার জন্য এবং তাকে সম্মানিত করার জন্য। তিনি একজন আদর্শবান মানুষ, সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগে, ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ফুসফুসের রোগ ও দৃষ্টিহীনতায় ভুগেছেন। এ বইটি এবং আরেকটি বই তিনি নির্দেশনা দিয়ে লিখিয়েছেন। তিনি শুধু বলেছেন আর তার একজন সহকারী শুনে শুনে লিখেছেন। আবার মুখে মুখে শুনে শুনে সম্পাদনাও করেছেন। এমন একটি বই এ রকম একটি আয়োজনে পুরস্কৃত হয়েছে, আমি মনে করি এটি বড় ব্যাপার।’
বণিক বার্তার প্রধান প্রতিবেদক মো. বদরুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং আয়োজনের প্রধান সহযোগী আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিওও কাজী মাহমুদ করিম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘বই আমাদের অবসরের সঙ্গী সন্দেহ নেই। পাশাপাশি আমরা যারা ক্লাসরুমে পড়াই আমাদের জন্য নন-ফিকশন বইয়ের আলাদা মাত্রা রয়েছে। পড়ানোর সময় ক্লাসরুমে সীমিত সময়ে তাত্ত্বিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে খুব বেশি হয়তো প্রায়োগিক বিষয় আলোচনা করার বা ভিন্নমাত্রায় যাওয়ার সুযোগ খুব একটা হয় না। কিন্তু নন-ফিকশন বই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে কারণে এ ধরনের মেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী আমরা যখন এই বাংলাদেশে আছি, তখন মুক্তবুদ্ধি ও স্বাধীন চেতনার আলোকে সামনে এমন আয়োজন আরো হবে। এ ধরনের আয়োজন আমাদের ঋদ্ধ করবে। আমাদের তর্ক করতে শেখাবে। আলোকিত করতে শেখাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের নন-ফিকশন বই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এক্সারসাইজের চেয়ে ভিন্ন কিছু মনে করি না। আমি মনে করি আমরা যে পঠন, পাঠন ও এক্সারসাইজের মধ্যে থাকি, এ ধরনের আয়োজন আমাদের আরো সমৃদ্ধ করবে। এ আয়োজনের আরো বিস্তৃতি ঘটালে আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লেখক-প্রকাশকদের সম্মিলন ঘটানো যাবে। এমন আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস এবং মেন্টাল ফ্যাকাল্টি প্রসারণে আমরা অবদান রাখতে পারব।’
অষ্টম নন-ফিকশন বইমেলা-২০২৪-এর প্রধান সহযোগী আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি কাজী মাহমুদ করিম বলেন, ‘আমরা সামাজিক নানা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। কিন্তু আমরা একটি ব্যাংক হয়ে বইমেলায় এসেছি। এর কারণ হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। আর যদি এটি নন-ফিকশন হয় তখন তো আরো বেশি কমে যায়। নন-ফিকশন বই আমাদের চিন্তাশক্তি বাড়ায়। নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে শেখায়। যখন দেখলাম এমন একটি সুযোগ এসেছে তখন নিজেদের না জাড়িয়ে থাকতে পারিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে ভবিষ্যতেও আমরা এটির সঙ্গে যুক্ত থাকব বলে আশা করছি।’
বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘বইমেলা শুরুর সময় আমরা ভাবিনি যে এটা আট বছর চালিয়ে নিতে পারব। লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বললে তারা সবসময় বলেন নন-ফিকশন বইয়ের পাঠক পাওয়া যায় না, বই বিক্রি হয় না। কিন্তু আমরা যখন শুরু করি, তখন আমাদের মনে হয়েছে এটি একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। এ সম্ভাবনাময় দেশকে যদি একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে দেশ হয়তো বৈশ্বিক জায়গায় একটা অবস্থান করে নিতে পারবে। এমন একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা থেকেই এ আয়োজনের সূত্রপাত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বক্তব্যে বলেন, ‘নন-ফিকশন বইমেলা ২০১৫ সাল থেকেই আমাদের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এবং বণিক বার্তার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারো মেলার আয়োজন করা হয়েছে। করোনা মহামারীর সময় আমরা করতে পারিনি। ৩৯টির বেশি প্রকাশনী এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। ২৮-৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ তিনদিন শিক্ষার্থী ও পাঠকের পদচারণায় এ মেলা ছিল উৎসবমুখর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা এ আয়োজনে গর্বিত, আমরা আনন্দিত।’
গতকাল শেষ হওয়া মেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ে বই কেনার সুযোগ ছিল। বইয়ের ক্রেতাদের জন্য মেলায় প্রতিদিন ছিল র্যাফল ড্রর আয়োজন। র্যাফল ড্রয়ে বিজয়ীরা পেয়েছেন আকর্ষণীয় সব পুরস্কার।
প্রকাশকদের মধ্যে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে প্রথমা প্রকাশন ও দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে দিব্যপ্রকাশ প্রকাশনী। দর্শকদের মধ্য থেকে পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে বিল্লাহ, হাবিব, ইমদাদুল আলি, প্রিয়া, সুব্র, জনি, হামিম আব্দুল্লাহ, হেলাল উদ্দিন, ঐশী ও নুর এবং বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন রাকিব।