সপ্তাহখানেক ধরেই তীব্র গরমে নাকাল রাজশাহীর মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে তেমন একটা বের হননি কেউ। এতে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে হাটবাজারে। ভোরের দিকে পাইকারি ও কিছু খুচরা ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপ বাড়ায় বাজারগুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।
রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহৎ হাট ও কাঁচাবাজার বসে নগরীর খড়খড়ি এলাকায়। খুচরা ও পাইকারিসহ হরহামেশা এ বাজারে সুলভ মূল্যে মেলে নিত্যপণ্য। সকাল-দুপুর প্রায় সব সময় হাটটি ক্রেতায় থাকে পরিপূর্ণ। কিন্তু গত সপ্তাহজুড়ে হাটটি ছিল ক্রেতাশূন্য।
খড়খড়ি হাটে ছাতা হাতে সারি সারি আমের ক্যারেট নিয়ে বসে আছেন সোমেন মণ্ডল। তিনি জানান, গরমের কারণে মানুষ বাজারে আসছে না। তাই বেচাকেনা কম। আমরাও ঠিকমতো বসে থাকতে পারছি না। হিমসাগর আম কিনেছি ৩০ টাকা কেজি দরে। বিক্রি করেছি ৩৫-৪০ টাকায়। এখন ২০-২৫ টাকা বিক্রি করছি। তাও ক্রেতা মিলছে না।’
অদূরেই কয়েকটি ট্রেতে করে ছোট-বড় মাছ নিয়ে বসে ছিলেন নাঈম হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকালের দিকে কিছু ক্রেতা আসছেন। বেলা বাড়তেই বাজার একেবারে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে এমনই হচ্ছে। এজন্য মাছও কম করে আনছি। তারপরও পড়ে থাকছে।’
আরো বেহাল অবস্থা মুরগি ব্যবসায়ীদের। জানতে চাইলে মুরগি বিক্রেতা মিলন শেখ বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে মুরগি। বাজারে ক্রেতাও নেই। গরমে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বয়লার মুরগি টিকছে না। গরমে অনেকক্ষণ খাঁচায় রাখার কারণে মুরগি মারা যাচ্ছে। বাজারে ক্রেতা থাকলে হয়তো এমন হতো না।’
গরমে শরীরে শক্তি ও মনে তৃপ্তি জোগায় আখের রস। গরমে চাহিদাও বেশ। কিন্তু রস বিক্রেতারাও জানান ক্রেতা সংকটের কথা। রফিকুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘গরমের কারণে দুপুরের দিকে ক্রেতা কমে যাচ্ছে। বিকাল আর সন্ধ্যায় কিছু ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে। আগে যেখানে দুপুরে ভালো ব্যবসা করতাম, এখন সেটা হচ্ছে না। এখন তিনবেলার জায়গায় দুইবেলা ব্যবসা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল দুপুরে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৩ শতাংশ, দুপুরে তা দাঁড়ায় ৬৫ শতাংশে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক রহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে মেঘের কিছুটা আনাগোনা ছিল। আগের দিনও এমন পরিবেশ ছিল। রাজশাহীসহ আশপাশের কিছু জেলায় হালকাসহ ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত হলে প্রাণ-প্রকৃতিতে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। তবে মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া কিংবা হালকা ঝড়, বৃষ্টিসহ বজ্রপাত হলেও পরিবেশ থাকবে তপ্ত। সপ্তাহ খানেক এমন বৈরী পরিবেশ থাকবে।’
এদিকে তীব্র গরমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও বাড়ছে রোগী। অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। একই সঙ্গে কিছু হিটস্ট্রোকের রোগীও হাসপাতালে আসছেন বলে জানান রামেকের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ডা. শঙ্কর কে বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘গত সাতদিনের মধ্যে বিগত চারদিনে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৪৯ জন।’