অর্থবছরের প্রথম আট মাস

রাজস্ব আহরণে ঘাটতি লক্ষ্যের তুলনায় প্রায় ২১%

প্রবৃদ্ধির হার ১.৭৬ শতাংশ

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অষ্টম মাস ফেব্রুয়ারিতে ২৬ হাজার ৯৯১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এর মধ্যে আহরণ হয়েছে ২৬ হাজার ৭৫১ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অষ্টম মাস ফেব্রুয়ারিতে ২৬ হাজার ৯৯১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এর মধ্যে আহরণ হয়েছে ২৬ হাজার ৭৫১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ কোটি ৯ লাখ টাকায়। যদিও এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এ আট মাসে মোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম আট মাস শেষে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতির হার দাঁড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশে।

লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি থাকলেও এ সময় রাজস্বে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে এনবিআর। সংস্থাটির হিসাবে একক মাস হিসেবে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৯ শতাংশ। আর অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

অর্থবছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির রাজস্ব আহরণের পরিসংখ্যান গতকালই একসঙ্গে প্রকাশ করেছে এনবিআর। এতে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যের তুলনায় বড় ধরনের ঘাটতি হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে আয়কর ও ভ্রমণ কর, মূসক এবং আমদানি-রফতানি খাতে শুল্ক ও মূসক বাবদ আহরণ।

এর মধ্যে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ঘাটতির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এ বাবদ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৯৯ হাজার ৩০১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। যদিও আহরণ হয়েছে ৭৩ হাজার ১৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে আয়কর বাবদ ৯৭ হাজার ৭৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৭১ হাজার ৯১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ভ্রমণ কর আহরণ লক্ষ্যের মধ্যে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এ আট মাসে স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাবদ আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ১০৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আয় হয়েছে ৫০ হাজার ৮৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

মূসক আহরণে ঘাটতির কথা স্বীকার করে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব আহরণ হয়েছে তুলনামূলক বেশি। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকাণ্ড কম থাকায় এ খাতে আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক আহরণও কম হয়েছে। সরকার ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোকে মহাখালী থেকে তাদের কারখানা স্থানান্তরের নোটিস দেয়ায় তারা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এ কারণে সিগারেট থেকে পাওয়া মূসক আহরণে বড় ধরনের অংশের ঘাটতি হয়েছে।’

জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্ক, মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ ৭৯ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৬৪ হাজার ৪৩৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ ১৫ হাজার ৩৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে এনবিআর-সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হলো, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কয়েক ধাপে নিত্যপণ্য ও ফল আমদানিতে শুল্ক ও করছাড় দেয়া হয়েছে। রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার পেছনে এটাও একটা কারণ।

এনবিআরের পক্ষ থেকে গতকালই চলতি অর্থবছরের জানুয়ারির রাজস্ব আহরণের পরিসংখ্যানও প্রকাশ করা হয়েছে। একক মাস হিসেবে এ সময় এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ছিল ৩৭ হাজার ৩৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৩৫ হাজার ৪২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

সামনের দিনগুলোয় রাজস্ব আহরণের গতি আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন এনবিআরের নীতিনির্ধারকরা। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো সরকার রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করলে রাজস্ব আহরণেরও গতি বাড়বে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘করজাল বাড়ানো, বকেয়া কর আহরণ এবং কর ফাঁকি উদ্ঘাটনে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। রাজস্ব কর্মকর্তারা নতুন উদ্যমে তাদের আদায় কার্যক্রম জোরদার করেছেন। ফলে সামনের দিনগুলোয় দেশে রাজস্ব আহরণের গতি আরো বেগবান হবে।’

আরও