বান্দরবানে অননুমোদিত চিড়িয়াখানা

আড়াই যুগে স্থানান্তর হলো মেঘলায় আটক বুনোপ্রাণীগুলো

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু করে মোট ২৩টি বন্যপ্রাণী ও ২টি খরগোশ উদ্ধারের কাজ শুরু করে বিভাগটি। এ সময় মেঘলা চিড়িয়াখানাটি অনুমোদিত নয় বলে জানান বিভাগটির বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূর জাহান। উদ্ধার কাজ চলার সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট চৈতন্য রাজবংশী উপস্থিত ছিলেন।

বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে আটকে রাখা বিপন্ন ১টি বাঁশ ভাল্লুক ও ২টি ভাল্লুকসহ ৬ ধরনের বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছে বন বিভাগ চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু করে মোট ২৩টি বন্যপ্রাণী ও ২টি খরগোশ উদ্ধারের কাজ শুরু করে বিভাগটি। এ সময় মেঘলা চিড়িয়াখানাটি অনুমোদিত নয় বলে জানান বিভাগটির বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূর জাহান। উদ্ধার কাজ চলার সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট চৈতন্য রাজবংশী উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, ১৯৯৪ সালে একটি ভাল্লুক শাবক দিয়ে মেঘলা চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়। এর পর ধারাবাহিকভাবে চিড়িয়াখানায় নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। সর্বশেষ বুধবার মেঘলা চিড়িয়াখানায় প্রদর্শিত পাঁচ প্রজাতির মোট ২৩টি বন্যপ্রাণী ও দুটি খরগোশ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ হিসেবে আড়াই যুগ পর গতকাল বন্যপ্রাণীগুলো হস্তান্তর করা হয়।

বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২২ জুন মেঘলা চিড়িয়াখানায় আটক ও প্রদর্শন করা বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের জন্য নোটিস দেয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। ইউনিটটির তৎকালীন পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন স্বাক্ষরিত ওই নোটিসটি দেয়া হয় বান্দরবান জেলা প্রশাসককে। সে সময় চিড়িয়াখানাটিতে একটি অজগর সাপ, বিপন্ন প্রজাতির দুটি ভাল্লুক, সাতটি মায়া হরিণ, একটি বাঘডাশা ও একটি বানর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একই বিষয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বর্তমান পরিচালক মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত আরো একটি নোটিস দেয়া হয় জেলা প্রশাসককে। নোটিসে বলা হয়, মেঘলা চিড়িয়াখানায় ২টি ভাল্লুক, ১টি বাঁশ ভাল্লুক, ১টি বন বিড়াল, ১৬টি মায়া হরিণ ও ৬টি বানর রয়েছে। যা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর পরিপন্থী। আইন অনুযায়ী লাইসেন্স বা পারমিট ব্যতীত বন্যপ্রাণী দখলে রাখা, শিকার, ক্রয়, বিক্রয় আইন পরিপন্থী এবং ধারা ৩২ অনুযায়ী জব্ধকরণের বিধান রয়েছে। এজন্য বন্যপ্রাণীগুলো বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের নিকট হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় নোটিসে।

এদিকে সম্প্রতি মেঘলা চিড়িয়াখানায় আটক রাখা বন্যপ্রাণীদের মধ্যে একটি ভাল্লুক আহত হয়। যা সামাজিক যোগাযোগসহ অন্যান্য মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে হওয়া সুয়োমোটো মামলায় গত ১০ এপ্রিল ঘটনাটি বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বান্দরবান সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এমরান এর আদালত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) দেয়া তদন্তের নির্দেশে বলা হয়, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র, সূচিব্যাখ্যা অঙ্কন করে স্থির চিত্রধারণ ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতরাসহ তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলা, গাফিলতি ও নিষ্ক্রিয়তার বিশদ বিবরণ আদেশ প্রাপ্তির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। নির্দেশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আদালতের পেশকার মো. রাকিব।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে সেলফোনে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মান্না দে।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, মেঘলা চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী প্রদর্শনের কোনো অনুমোদনই নেই। এ চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট খাঁচায় রাখা হয় ভাল্লুক দুটিকে। যাতে তাদের চলাফেরা করার জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেই। এ কারণে কোনো না কোনোভাবে আঘাত পেয়ে একটি ভাল্লুক আহত হয়েছে। বর্তমানে ভাল্লুকটি চিকিৎসাধীন। এছাড়া হরিণগুলোও দীর্ঘদিন ধরে অপর্যাপ্ত বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে। একই অবস্থায় রাখা হয়েছে বানরগুলোসহ বিপন্ন বাঁশ ভাল্লুক ও বন বিড়ালকে। দীর্ঘদিন ধরে প্রাণীগুলো মাটির স্পর্শই পায়নি। তবে নোটিসে মেঘলায় প্রদর্শিত হওয়া বন্যপ্রাণীগুলো বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে বলা হলেও বুধবার বন্যপ্রাণীগুলো বুঝে নিয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ বলে সুত্র জানায়। এ বিষয়ে জানতে সেলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া দেননি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট থেকে মেঘলার বন্যপ্রাণীগুলো উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানান বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূর জাহান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ দুটিই বন বিভাগের অংশ। বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আমরা লোকাল টিম এখানে এসেছি। আপাতত আমাদেরকে নিতে হবে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। মানে যত কম সময়ে নিতে পারি সে ব্যবস্থা করেছি। শুধু আদালতের রায় বিষয়টা তা না। আদালতের রায়টা হচ্ছে আমাদের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট। এছাড়া ১৬টি মায়া হরিণের মধ্যে ১৩টি বুঝে পেয়েছি। কারণ হিসেবে মেঘলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন বেষ্টনীতে সরানোর সময় ৩টি হরিণ মারা যায়। এর মধ্যে ৮টি হরিণ এখনো আহত রয়েছে। এছাড়া মারা যাওয়া তিনটি হরিণের পোস্টমর্টেম রিপোর্টসহ অন্যান্য আলামত যাচাই করা হবে।

সেলফোনে সংযোগ না পাওয়ায় এসব বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও