দেশের প্রথম সারির ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) তহবিলের বড় অংশই গ্রাহকদের সঞ্চয় ও ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংগ্রহ ব্যয় খুবই কম। যদিও স্বল্প সুদের এ তহবিল থেকেই সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছে তারা। উচ্চ সুদে নেয়া এ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দেশের প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) সনদ নিয়ে বর্তমানে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৭৩১টি বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান। পৃথক আইনে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকও এ ঋণ বিতরণ করে থাকে। এমআরএর বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের জুন শেষে দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের মোট তহবিলের আকার ছিল ৩৭ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৯৭ কোটি টাকাই ছিল গ্রাহকের সঞ্চয়। ১৪ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ছিল ব্র্যাকের ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত। অলাভজনক না হলে উদ্বৃত্ত থাকা অর্থের পুরোটাই মুনাফার খাতায় নিতে পারত প্রতিষ্ঠানটি।
সে হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ব্র্যাকের মোট তহবিলের ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশই নিজস্ব উৎসের। বাকি ৪ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্র্যাকের তহবিল ব্যয় ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পোর্টফোলিও ইল্ড ছিল ২৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশের তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে তারা।
ব্র্যাকের চেয়েও তহবিল ব্যয় অনেক কম ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আশার। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির তহবিল ব্যয় মাত্র ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ব্যয় এতটা কম হওয়ার কারণ হলো আশার ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত। গত বছরের জুন শেষে আশার ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত ছিল ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে জমা ছিল গ্রাহকের ৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকার সঞ্চয়। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে আশার নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১২০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৩১ হাজার ৮০ কোটি টাকার মোট তহবিলের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৫৮ শতাংশই ছিল নিজস্ব উৎসের। যদিও ব্র্যাকের মতো আশাও সর্বোচ্চ সুদ তথা ২৪ শতাংশে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছে।
এমআরএর বিধান অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। আবার গ্রাহকের অনুকূলে অনুমোদনকৃত ঋণের একটি অংশও জামানত হিসেবে রাখা হয়। গ্রাহকদের সঞ্চয়ের বিপরীতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করার শর্ত রয়েছে। যদিও এমআরএর তথ্য বলছে, দেশের বড় কোনো ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাই সঞ্চয়ের বিপরীতে গ্রাহকদের নির্ধারিত হারে সুদ পরিশোধ করছে না। বিপরীতে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ২৪ শতাংশ হারে সুদ আদায় করছে। এর বাইরেও বিভিন্ন ফি বাবদ আরো ৪-৫ শতাংশ সুদ অতিরিক্ত আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমআরএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৭৩১টি। সারা দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৩৩৬টি শাখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত রয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার জনবল। ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৮ লাখ। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩০২ কোটি টাকার ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে আদায় করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার ঋণ। জুন পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোয় গ্রাহকদের সঞ্চয়ের স্থিতি ছিল ৬২ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। আর এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৪২১ কোটি টাকা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৈরি করা ক্রমধারা অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ ১০ ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান হলো ব্র্যাক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস), সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস (এসএসএস), জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন (জেসিএফ), সাজেদা ফাউন্ডেশন (এসএফ), পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, উদ্দীপন ও শক্তি ফাউন্ডেশন। দেশের ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের প্রায় ৭০ শতাংশই এ ১০টি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবে এমআরএর সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে দেশে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করছে গ্রামীণ ব্যাংক। এ ব্যাংকটির গ্রাহক সংখ্যাও ১ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ৭১ লাখ ৬০ হাজার ঋণগ্রহীতা রয়েছে। সারা দেশে ২ হাজার ৫৬৮টি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্যাংকটি। গ্রামীণ ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ২৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ১৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গ্রামীণ ব্যাংকে গ্রাহকদের ২২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার সঞ্চয় রয়েছে। এমআরএর সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো গ্রামীণ ব্যাংকও সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করে। যদিও ব্র্যাক, আশার মতো অলাভজনক এ ব্যাংকটির তহবিলের বড় অংশও নিজস্ব উৎসের।
চলতি অক্টোবরেই এমআরএর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। স্বল্প সুদের তহবিল থেকে সর্বোচ্চ সুদে দেশের বড় ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের বিষয়ে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এ প্রশ্নটি সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে করা দরকার। ক্ষুদ্র ঋণদাতা বড় প্রতিষ্ঠান আর ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংগ্রহ ব্যয় সমান নয়। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক বা অন্য উৎস থেকে ঋণ নিয়ে সেটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে থাকে। কিন্তু বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল যেহেতু নিজস্ব উৎসের, সেহেতু তারা আরো কম সুদে ঋণ দিতে পারে। এখন সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের সীমা নির্ধারণ করা আছে। বড়, মাঝারি ও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভিন্ন সীমা নির্ধারণ করা যায় কিনা, সেটি আমাদের চিন্তায় আছে।’
বৈষম্যবিরোধী সমাজ বিনির্মাণের কথা বলা হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ঋণের অর্থ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে বলে মনে করেন ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো প্রান্তিক মানুষের আমানত এনে বড় ঋণগ্রহীতাদের কম সুদে দিচ্ছে। এ ঋণগ্রহীতারা যদি কলকারখানা নির্মাণ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখত, তাহলে বৈষম্য কমত। কিন্তু আমরা সেটি দেখছি না। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সর্বোচ্চ সুদে ঋণ নিতে গিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আরো বেশি বৈষম্যের মুখে পড়ছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসতে হলে এ বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।’
দেশের শীর্ষ ১০ ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এগুলোর মোট তহবিলের আকার ১ লাখ ৪ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকাই তাদের ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্ত। আর ৪১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা হলো প্রতিষ্ঠানগুলোয় থাকা গ্রাহকের সঞ্চয়। অর্থাৎ মোট তহবিলের ৮০ দশমিক ৩৩ শতাংশই নিজস্ব উৎস থেকে সংগ্রহ করেছে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে ক্রমপুঞ্জীভূত উদ্বৃত্তের বিপরীতে কোনো ব্যয়ও নেই। বাণিজ্যিক ব্যাংক, পিকেএসএফসহ অন্যান্য উৎস থেকে বাকি ২০ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা জোগান নিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান।
এমআরএর নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠাগুলো গ্রাহকদের সঞ্চয়ের বিপরীতে ৬ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধের কথা। কিন্তু দেশের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই আমানতকারীদের নির্ধারিত হারে সুদ পরিশোধ করছে না। এক্ষেত্রে গত অর্থবছরে গড়ে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করেছে ব্র্যাক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করেছে উদ্দীপন। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করেনি। সঞ্চয়ের বিপরীতে সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৭২ শতাংশ হারে সুদ দিয়েছে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)।
ব্যয়ের তুলনায় আয় অনেক বেশি হওয়ায় প্রতি বছরই দেশের ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত বাড়ছে। গত বছরের জুন পর্যন্ত শীর্ষ ১০ ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত ছিল আশার। ব্র্যাকের ছিল ১৪ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যুরো বাংলাদেশের ২ হাজার ৭৩৫ কোটি, টিএমএসএসের ১ হাজার ৮৪৩ কোটি, এসএসএসের ১ হাজার ১২৭ কোটি, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ছিল ১ হাজার ৪৯ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত। আর সাজেদা ফাউন্ডেশনের উদ্বৃত্ত ৩৮৫ কোটি, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের ৩২২ কোটি, উদ্দীপনের ৪০৮ কোটি ও শক্তি ফাউন্ডেশনের ২৪৫ কোটি টাকা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএর কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পরিচালন ব্যয় বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি দেখাচ্ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া যায় না। প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা দামি গাড়িতে চড়ছেন, মোটা অংকের বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। পরিচালন খাতের এসব অপব্যয় ও দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব হলে আরো কম সুদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ক্ষুদ্র ঋণ পৌঁছানো সম্ভব হতো।
এমআরএর পরিচালক (ফাইন্যান্স, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ও হিসাব বিভাগ) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র ঋণের সুদহার কমানোর জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরোধিতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি হলো তাদের পরিচালন ব্যয় ১৭-২০ শতাংশ। এ কারণে তাদের পক্ষে ২৪ শতাংশের কম সুদে ঋণ বিতরণ সম্ভব নয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো সঞ্চয়কারীদের সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ সুদ দেয়ার কথা। কিন্তু সেটি বাস্তবে দেয়া হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা দরকার।’
দেশের ব্যাংক খাতে এ মুহূর্তে তীব্র তারল্য সংকট। ফলে ব্যাংকগুলোই এখন ১৫-১৬ শতাংশ সুদে গ্রাহককে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক ঋণের জন্য এরচেয়েও বেশি সুদ দাবি করছে। এ পরিস্থিতিতে তহবিল সংগ্রহ নিয়ে বিপাকে পড়েছে মাঝারি ও ছোট ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বিষয়ে চতুর্থ বৃহৎ ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান টিএমএসএসের প্রতিষ্ঠাতা ড. হোসনে আরা বেগম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তারল্য সংকটের কারণে গত এক বছরে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংগ্রহ ব্যয় বেড়ে গেছে। আগে আমরা ব্যাংকের কাছ থেকে ৮-৯ শতাংশ সুদে তহবিল পেতাম। কিন্তু এখন ১৬ শতাংশ সুদেও ঋণ নিতে হচ্ছে। তাছাড়া ব্র্যাক ও আশার মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব তহবিলের আকার অনেক বড়। টিএমএসএসের নিজস্ব তহবিলের আকার বড় না হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ বেশি নিতে হয়। এ কারণে আমাদের পক্ষে সর্বোচ্চ সুদে ঋণ বিতরণ ছাড়া পরিচালন ব্যয় উঠিয়ে আনা সম্ভব নয়।’
হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যথায় মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল সংকটের কারণে বিপদে পড়বে। আর ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধও হয়ে যেতে পারে।’