নিয়োগ নেই বেশিরভাগ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। যেখানে আছে সেখানেও যান না চিকিৎসকরা। কাগজে-কলমে বছরের পর বছর পদায়ন থাকলেও তাদের চেনেন না ওই এলাকার মানুষ। এভাবেই চলছে ঝিনাইদহের ১৩টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। যে কারণে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলো। সেবা নিতে তাদের ছুটতে হয় গ্রাম থেকে উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা বাদে বাকি ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো হলো- সদর উপজেলার হরিশংকরপুর, সাধুহাটি, কোটচাঁদপুরের পাঁচলিয়া, তালসার, জয়দিয়া, মহেশপুরের তালসার, মান্দারবাড়ীয়া, শ্যামকুড়, যাদবপুর, শৈলকুপার কাঁচেরকোল, আবাইপুর, ও কালীগঞ্জের বারোবাজার ও বলরামপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলো ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ১৫শ থেকে ২ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ আরো জানায়, এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর মধ্যে হরিশংকরপুর, কাঁচেরকোল, পাচলিয়া, তালসার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক পদায়ন রয়েছে। অন্যগুলোতে পদ শূন্য রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পদায়ন থাকলেও সেখানে যান না চিকিৎসক। সহকারী মেডিকেল অফিসারের পদায়ন থাকলেও নানা অজুহাতে সেখানে যান না অনেকে। একইসঙ্গে বেহাল অবস্থা এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভবনগুলোরও। সর্বশেষ ২০১৯ সালে কিছুটা মেরামতের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রেরই জরাজীর্ণ অবস্থা। সেখানেই সেবা দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। তবে চাহিদা অনুযায়ী সেবা পাচ্ছে না সেবাপ্রত্যাশীরা।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একজন অফিস সহায়ক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। সেখানে দেখা মেলেনি সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারেরও। ঠাণ্ডা জ্বরের ওষুধ দিচ্ছেন অফিস সহায়ক। অনেক রোগীকে দেখা গেছে চিকিৎসা না নিয়েই ফেরত যেতে।
এদিকে চিকিৎসকসহ জনবল পদায়ন না হওয়ায় দেড়যুগের বেশি সময় আগে বন্ধ হয়ে গেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। খুলে পড়ছে ইট ও পলেস্তারা। চুরি হয়ে গেছে জানালা-দরজা। এটি পরিণত হয়েছে জঙ্গল আর গোয়ালে। অথচ সরকারি খাতায় এখনো চালু এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।
একইভাবে সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। নামমাত্র চলছে চিকিৎসা সেবা।
সেবা নিতে আসা নাজমা খাতুন নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, আমরা এর আগে এখানে একজন বড় ডাক্তার দেখেছি। তিনি মাঝে মাঝে এসে আমাদের সেবা দিতেন। অনেক বছর হয়ে গেল তিনি চলে গেছেন। এরপর আর কাউকে তো দেখি না।
রাশেদ নামের এক রোগী বলেন, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসলে শুধু জ্বর আর ঠাণ্ডার ওষুধ পাই। এত বড় হাসপাতাল করছে সরকার। শুনেছি নাকি এখানে বড় ডাক্তারের নিয়োগও আছে কিন্তু তাকে তো পাই না। আমরা চাই, এখানে একজন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেয়া হোক, যিনি নিয়মিত আমাদের সেবা দেবেন।
কাঁচেরকোল ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক নাহিদ ইমরান তন্বি বলেন, আমার পদায়ন কাঁচেরকোল থাকলেও ডেপুটেশনে রাখা হয়েছে ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালে। শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা দিতেই হিমশিম খেতে হয়। কাঁচেরকোল জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। শিশু হাসপাতালে সেবা দিয়ে অতদূরে কীভাবে যাব?
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মিথিলা ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের জেলায় চিকিৎসক সংকট আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তারাও আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন জেলায় চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে। আশা করি, নিয়োগ দেয়া হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।