দেশে মোট বর্জ্যের ২০ শতাংশই মেডিকেল

দৈনিক ২১ টন বর্জ্য হচ্ছে ১৫ সরকারি হাসপাতালে

দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে তার প্রায় ২০ শতাংশই মেডিকেল বর্জ্য। দেশের ১৫টি সরকারি হাসপাতালেই প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ২১ টনের বেশি বর্জ্য। কিন্তু দৈনিক তৈরি হওয়া এত বিপুল পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো কার্যকর উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি ৩৫টি জেলার সরকারি হাসপাতালে। ফলে বাড়ছে হেপাটাইসিস বি ও হেপাটাইসিস সি,

দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে তার প্রায় ২০ শতাংশই মেডিকেল বর্জ্য। দেশের ১৫টি সরকারি হাসপাতালেই প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ২১ টনের বেশি বর্জ্য। কিন্তু দৈনিক তৈরি হওয়া এত বিপুল পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো কার্যকর উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি ৩৫টি জেলার সরকারি হাসপাতালে। ফলে বাড়ছে হেপাটাইসিস বি হেপাটাইসিস সি, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া এমনকি এইডসের মতো রোগের প্রকোপও।

সাধারণ অর্থে বলা যায়, চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় যেসব বর্জ্য তৈরি হয়, তাদের বলে মেডিকেল বর্জ্য। এক গবেষণার ভিত্তিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক বলছে, করোনাকালে শুধু কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষের ব্যবহূত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী থেকে প্রতিদিন ২৮২ দশমিক ৪৫ টন বর্জ্য উত্পন্ন হয়। যার পুরোটাই গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে অপসারণ করা হয়। ২০২০ সালের মে মাসে শুধু ঢাকাতেই তিন হাজার টন মেডিকেল বর্জ্য উত্পন্ন হয়েছে। থেকেই বোঝা যায় পরিবেশ জনস্বাস্থ্যের জন্য মেডিকেল বর্জ্য কতটা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সে বছরের ২০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গবেষণাটি করা হয়। আবার দেশের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে যে বর্জ্য উত্পন্ন হয়, তার মাত্র ১৪ দশমিক শতাংশ সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল। সেসবও মাত্র একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপসারণ শোধন করা হয়। বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা বিনষ্ট বা শোধন করার নিজস্ব কোনো ব্যবস্থাপনা নেই অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, জনস্বাস্থ্য পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এমন ধারণা নিয়ে হাসপাতালগুলোকে শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দৈনিক ক্যাটাগরির হাসপাতালে ১২ টন, বি ক্যাটাগরির হাসপাতালে টন এবং সি ক্যাটাগরির হাসপাতালে দশমিক টন বর্জ্য অপসারণ করা প্রয়োজন। দূষণকারীর তালিকায় ক্যাটাগরিতে আছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত চারটি হাসপাতাল। বি ক্যাটাগরিতে আছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যদিকে সি ক্যাটাগরিতে রয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল, বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতাল, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল, জয়পুরহাট আধুনিক সদর হাসপাতাল, পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল, পিরোজপুর সদর হাসপাতাল শেরপুর সদর হাসপাতাল।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন, অর্থায়ন এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এক করে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। সমস্যার মোকাবেলায় চারটি বিষয়ে জোর দিতে হবে সচেতনতাকে অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, সবার উদ্যোগের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জন, টেকসই সমাধানের কৌশল নির্ধারণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে এখন আদিকালের মতো ব্যবস্থাপনা নেই। মেডিকেল বর্জ্য অপসারণে আধুনিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। তবে কথা সত্য যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। সেসব ত্রুটি সংশোধনে কার্যক্রম চলছে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য আর অব্যবস্থাপনায় থাকবে না। স্বল্প সময়েই আমরা খাতে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা আনতে সক্ষম হব।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, দেশের ৩৫টি জেলায় পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। দেশের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হাসপাতাল বর্জ্য পরিশোধনের সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, এমনকি এইডসের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি বাড়ছে। দৈনিক যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয় তার ৮০ শতাংশ সাধারণ গৃহস্থালি বর্জ্য আর ২০ শতাংশ মেডিকেল বর্জ্য। ২০ শতাংশ মেডিকেল বর্জ্য কোনো না কোনোভাবে ৮০ শতাংশ সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যায়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে ৩৫টি হাসপাতালে তিনটি পদ্ধতি (অটোক্রভিং, ইনসিনারেশন ইটিপি) প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব দেয়। তাতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৬২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে প্রস্তাবিত তিনটি পদ্ধতি একসঙ্গে ব্যবহারের ফলাফল পরীক্ষিত না হওয়ায় প্রথমে ১৫টি হাসপাতালে দুটি গ্রুপে (একটিতে অটোক্লেভিং, ইনসিনারেশন ইটিপি পদ্ধতি এবং অপরটিতে মাইক্রোওয়েভ, ইনসিনারেশন ইটিপি পদ্ধতি) পাইলট প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ গৃহীত হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন হবে। ফলে জনস্বাস্থ্য পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ছাড়া ক্যাটাগরি , বি সি শ্রেণীর প্রতিটিতে প্রতিদিন যথাক্রমে মোট ১২ টন, টন দশমিক টন চিকিৎসা বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা তৈরি করা হবে।

বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সব সরকারি হাসপাতালে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালেও সঠিক নিয়মে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৫টি সরকারি হাসপাতালে হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত আদর্শমান বজায় রেখে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মানুষের স্বাস্থ্য পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ছাড়াই বিভিন্ন চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ অপসারণের সক্ষমতা তৈরি হবে। তাছাড়া সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন সংক্রমণমুক্ত পরিবেশে চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হবে।

আরও