বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদারীপুর জেলায় বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। নদীভাঙনে ঘর-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। ঘর-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন অনেকেই। এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বহু ঘর-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। ফলে সবসময়ই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এলাকাবাসী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের আন্ডারচর গ্রামের মৃত লোকমান শরীফের স্ত্রী তাসলিমা বেগম আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি ভিটেমাটিছাড়া হয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামীর কবরটিও এখন নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি এহন কোনহানে থাকব, তার কিছুই জানি না। সরকার যদি আমারে একখান ঘর উডাইয়া দেয়। তাইলে এট্টু থাকতে পারি। আমার স্বামী-সন্তান কিছুই নাই।’
শুধু তাসমিলা বেগমই নয়। এই রকম অবস্থা মাদারীপুরের আরো অনেক পরিবারের। চলতি মৌসুমেও মাদারীপুর জেলায় দুটি উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে কালকিনি উপজেলার ১২টি স্থানে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার সিডিখান, বাশগাড়ী, সাহেবরামপুরে আন্ডারচর, জাউল্লারহাট, করিমেরহাট এলাকায় দোকানপাট, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া মাদারীপুর সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর চরগোবিন্দপুর দক্ষিণকান্দি, পাঁচখোলার আড়িয়াল খাঁ নদীর পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর এসব এলাকার পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে ভাঙন আতঙ্কে বসবাস করছে। এছাড়া অনেক মানুষের বাড়ি-ঘর একাধিকবার ভাঙনে বিলীন হওয়ায় পুনরায় জমি ক্রয় করে যে বসতবাড়ি করবে তাও অনেকের সামর্থ্য নেই। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দোকানপাট, পোস্ট অফিস, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হাসান বলেন, ‘আমাগো বাড়ির পাশ দিয়া আড়িয়াল খাঁ নদীটি চলে গেছে। এহন বাইষ্যা (বর্ষা) কাল। নদীতে অনেক পানি। ভাঙনও শুরু হইছে। সারা বছর নদীর মধ্য থেকে বালি ওঠানোর কারণে নদীভাঙন বেশি হচ্ছে। অনেক স্থানে নদী ভাঙতেছে।’
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করা হয়েছে। ভাঙনকবলিত স্থানগুলো চিহ্নিত করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’